Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গণ টিকাই চাপ বাড়ছে, লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না টিকা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৮:৫০ AM
আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২১, ০৮:৫০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


পরিচিত ও প্রভাবশালীদের লাইন ছাড়াই টিকা দেওয়ার কারণে সাধারণ জনগণ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও টিকা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে ৩৫০ ডোজ। লাইন ধরছে ৫০০-৬০০ মানুষ। চাপ বেশি থাকায় অনেকেই টিকা পাচ্ছে না। তাই লোকজনকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশজুড়ে চলা এ গণটিকাদান কর্মসূচিতে ধারণার চেয়েও বেশি সাড়া মিলেছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শনিবার শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে ছয় দিনে সারাদেশে ৩৫ লাখ টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দুই দিনেই তা দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ টিকা কমে আসায় অনেক এলাকায় দৈনিক ডোজের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশের একাধিক কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মানুষ। কিছু কেন্দ্রে বেলা ১১-১২টার মধ্যেই কোটার নির্ধারিত ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যায়। কোনো কোনো কেন্দ্রে লাইনের লোককে টিকা দেওয়া নিয়েও ঝামেলা দেখা দেয়। ভিড়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই ছিল না।

দুপুর ১২টার দিকে গোপীবাগের সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের কেন্দ্রে দেখা যায় গেটের বাইরে মানুষের জটলা। দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্য তাদের পরদিন আসতে বলছেন। গোপীবাগ জর্জ গলির বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বলেন, এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানতে পেরেছেন- টিকা শেষ হয়ে গেছে। কাল আসতে বলেছে।

এক আনসার সদস্য জানান, টিকা শেষের দিকে। যত ডোজ আছে, ততজন লোক ভেতরে ঢুকিয়ে বাকিদের পরদিন আসতে বলা হয়েছে। তবে আধাঘণ্টা ওই কেন্দ্রে অবস্থান করে দেখা যায়, পরে এসেও অনেকে টিকা পেয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা ভেতরে ঢুকছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে অনেককেই সুযোগ দিতে হচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরার একটি গণটিকা কেন্দ্রে কথা হয় দুলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোর ৪টা থেকে অপেক্ষা করে দুপুর সাড়ে ১২টায় টিকা পান। গেটের বাইরে তিনি ৪০ জনের মধ্যে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় টিকা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু গেটের ভেতরে ঢুকে লাইনের প্রথম জনেরই সিরিয়াল পড়ে ৫০-এর পরে।

তাহলে আগে কারা টিকা পেয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজন বৃদ্ধ ঢুকেছেন। বাকি যাদের টিকা দিচ্ছে, তারা পরিচিত বা স্থানীয় প্রভাবশালী। এ সময় বাইরে হইচই শোনা যায়। দেখা যায়, নারীদের লাইনে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। লাইনে থাকা নারীরা সিরিয়ালের বাইরের লোকদের আগে টিকা দেওয়ার অভিযোগ করেন। কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, টিকা কম; মানুষ বেশি। সবার মধ্যে তাই তাড়াহুড়ো রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, সিরিয়ালের বাইরে কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, যারা টিকা পাচ্ছেন না, তারা পরদিন এলে টিকা পাবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, আরও তিন দিন প্রতি কেন্দ্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে জোগান কম থাকায় একটু চাপ যাচ্ছে।

রাজধানীর একটি গার্মেন্টসে কাজ করা নাছিমা আক্তার কোভিড-১৯-এর টিকা নিতে সোমবার ভোর ৫টায় লাইনে দাঁড়ান রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তার ভাগ্যে টিকা মেলেনি। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উত্তেজিত হয়ে চিল্লাচিল্লি করতে করতে কেন্দ্রের সামনে থেকে চলে যান এই পোশাক-শ্রমিক।

এ সময় তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গতকাল সকাল ৭টার সময় এসে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু তার আগেই অনেকে লাইনে দাঁড়ানোর কারণে গতকাল তিনি টিকা নিতে পারেননি। এ কারণে আজ ভোর ৫টার সময় এসে লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু আজও তার ভাগ্যে টিকা মেলেনি।

তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন দেড়শ জন নারী ও দেড়শ জন পুরুষকে টিকা দেয়া হয়। যারা দায়িত্বপালন করছেন তারা পরিচিতদের ডেকে ডেকে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন। আর আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা নিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, দু’দিন লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরে যাচ্ছি। এখন আবার কাল আসতে বলেছে। টিকা নিতে হবে, কিছু তো করার নাই। আমাদের কথা কেউ শোনে না। অবস্থা এমন- জোর যার মুল্লুক তার।

শুধু নাছিমা নয় রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিতে এসে হতাশ হতে হয়েছে হাজারের অধিক নারী-পুরুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও একপর্যায়ে তারা ফিরে যান।

সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত দুই হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সাড়ে ৯টার দিকে তাদের মধ্য থেকে দেড়শ জন নারী ও দেড়শ জন পুরুষকে ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়া হয়। বাকিদের জানিয়ে দেয়া হয়- আজ আর টিকা পাওয়া যাবে না, আগামীকাল আবার আসতে হবে।

টিকাকেন্দ্রের গেটে দায়িত্বপালন করা একজন কর্মী বলেন, এখানে একদিনে মোট ৩০০ জনকে টিকা দেয়া হয়। সে হিসাবে আমরা দেড়শ জন নারী ও দেড়শ জন পুরুষকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছি। যারা আগে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারাই ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।

রামপুরার উলন রোড থেকে টিকা নিতে আসা রইস উদ্দিন বলেন, সকাল ৬টার আগে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এখন (সকাল সাড়ে ৯টা) বলছে আজ আর পাওয়া যাবে না। টিকা নিতে হলে আগামীকাল আবার আসতে হবে। প্রথম দেড়শ জনের মধ্যে লাইনে থাকলে টিকা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষকে শুধু হয়রানি করা হচ্ছে। গতকাল দেখেছি হাজারের বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। আজও একই অবস্থা। যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগ টিকা পারেন না। তাহলে এমন ক্যাম্পেইন চালিয়ে লাভ কি- প্রশ্ন করেন তিনি।

ফারিয়া নামে এক টিকা গ্রহণেচ্ছু বলেন, গতকাল ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়া টিকা নিয়ে গেছে। আমি আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে দেড়শ-দুইশ মতো মানুষ ছিল। ভেবেছিলাম টিকা নিতে পারব। কিন্তু আমার আগে লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই টিকা পাননি। এখন আমাদেরকে আবার কাল আসতে বলা হচ্ছে। কাল আবার আসব, জানি না টিকা পাব কি-না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ধরনের হয়রানি। তাছাড়া টিকা নিতে এসে মানুষের যেমন ভিড় হচ্ছে তাতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই এভাবে মানুষকে হয়রানির না করে, সহজভাবে কীভাবে টিকা দেয়া যায় সেই পথ খোঁজা উচিত।

Bootstrap Image Preview