Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সেই সাড়ে ৩ কোটি টাকার গাড়িটি কিনেনি পরীমনি!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ আগস্ট ২০২১, ১০:০০ AM
আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২১, ১০:০০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর মাদক মামলায় এখন চার দিনের রিমান্ডে। বনানী থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে পরীমনির এই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। আলোচিত এই অভিনেত্রী গত জুলাইয়ে বোট ক্লাব-কাণ্ডে জড়ানোর পর থেকেই তার বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে আলোচনার পালে হাওয়া লাগে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, কথিত মডেল পিয়াসাদের সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন পরীমনি, যাদের কাজ মাদক ও নারী ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেইল করা। বিত্তশালীদের কাছ থেকে নিয়মিত দামি উপহার ও উপঢৌকন নেয়ার অভিযোগও রয়েছে পরীমনির বিরুদ্ধে।

এরপর থেকেই আলোচনা ছড়ায় পরীমনির একটি গাড়িকে নিয়ে। বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র দাবি করে, ফিয়াট অটোমোবাইলস্-এর ‘মাসেরাতি’ ব্র্যান্ডের সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের ওই গাড়িটি পরীমনিকে উপহার হিসেবে কিনে দিয়েছেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

তবেঅনুসন্ধানে দেখা গেছে, গাড়িটির মালিকানা পরীমনির নয়। এমনকি সেটি এখন আছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শোরুমে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাসেরাতি ব্র্যান্ডের গাড়িটি পরীমনি কিনতে চেয়েছিলেন, তবে পরে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পরীমনি তার টয়োটা হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৯৬৫৩) গাড়িটিই ব্যবহার করছিলেন।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মাসেরাতি ব্র্যান্ডের গাড়িটি নিয়ে আলোচনার শুরু গত বছরের ২৫ জুন। এর আগের দিন পরীমনির ব্যবহৃত টয়োটা হ্যারিয়ার মডেলের সাদা রঙের এসইউভি গাড়িটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটির ছবি নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে পরীমনি লেখেন, ‘গুড মর্নিং’।

তার পরদিন অর্থাৎ ২৫ জুন পরীমনি ফেসবুকে একটি নীল রঙের গাড়ির সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘নয়া প্রেমিক- ফার্স্ট ডেট’। ওই পোস্টে হ্যাশট্যাগ দেন মাসেরাতি।

ছবিতে দেখা যায় নীল রঙের মাসেরাতি গাড়িটি পরীমনির বাসার পার্কিংয়ে রাখা। গাড়ির শোরুমের নম্বর প্লেটযুক্ত (ঢাকা-শ/৪৬২) ওই গাড়িটির সামনে ও ভেতরে বসে ছবি পোস্ট করেন পরীমনি। এর এক বছর পর আলোচিত অভিনেত্রী গ্রেপ্তার হলে মাসেরাতি ব্র্যান্ডের গাড়িটি নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ওই গাড়িটির বিষয়ে কোনো বক্তব্যই আসেনি। সেটি জব্দের বিষয়েও কোনো তথ্য কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

তাহলে সেই গাড়িটি কোথায়, এমন অনুসন্ধানে জানা গেছে গাড়িটির মালিকানা কখনও পরীমনির ছিল না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ জুন দুর্ঘটনায় পরীমনির টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িটি সামনের দিকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেদিন বিকেলেই মেরামতের জন্য গাড়িটি পাঠানো হয় ওয়ার্কশপে। পরদিন পরীমনি গুলশানের একটি গাড়ির শোরুম অটো মিউজিয়ামে যান। শোরুমে মাসেরাতি গাড়িটি তার পছন্দ হয়।

এরপর এক দিনের টেস্ট ড্রাইভের জন্য শোরুমের ম্যানেজার গাড়িটি পরীমনির বাসায় দিয়ে আসেন। পরদিন পরীমনির অগ্রিম টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি সেটি দিতে পারেননি। এরপর শোরুমের ম্যানেজার গাড়িটি ফেরত নিয়ে আসেন।

ওই গাড়িটি এখনও গুলশানের শোরুমেই আছে বলে জানিয়েছেন অটো মিউজিয়ামের মালিক মো. হাবিব উল্লাহ ডন।

তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা এসে কোনো গাড়ি পছন্দ করলে টেস্ট ড্রাইভের জন্য আমরা সাধারণত কাস্টমারের বাসায় পাঠিয়ে দিই। আমি সে সময় দেশের বাইরে ছিলাম। আমার ম্যানেজার যখন দেখল, একজন নায়িকা (পরীমনি) গাড়ি কিনতে এসেছেন, তখন সে আর চিন্তা করেনি যে, সে সাড়ে তিন কোটি টাকা দিয়ে গাড়ি কেনার সামর্থ্য রাখে কি না। সে খুশি মনে ওই নায়িকার বাসায় গাড়ি দিয়ে এসেছিল। পরদিন অ্যাডভান্স না করায় আমি ম্যানেজারকে ধমক দিই, এরপর সে গিয়ে গাড়ি ফেরত নিয়ে আসে।’

হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘ততক্ষণে ওই নায়িকা আমার যা ক্ষতি করার করে ফেলেছেন। উনি গাড়ি না কিনেই তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যে, ওটা তার নতুন গাড়ি। ওই মহিলার (পরীমনি) বোকামির কারণে আমার এত দামি গাড়িটা বিক্রি হচ্ছে না, এক বছর হয়ে গেল গাড়িটা শোরুমেই পড়ে আছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘এই গাড়ির ছবি তো ভাইরাল হয়ে গেছে যে, এটা পরীমনির গাড়ি। এখন কাস্টমাররা মনে করেন, এই গাড়ি পরীমনি যেহেতু ফেরত দিয়েছেন, তাহলে হয়তো সমস্যা আছে।’

সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের এই গাড়ি সম্পর্কে পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র‌্যাব ও ডিবির গোয়েন্দারা। র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাকে এই গাড়ির বিষয়ে অনেক প্রশ্ন করেছি। প্রথমে সে বলেছিল, এটা আরেকজনের গাড়ি, ধার করে এনে একদিন চালিয়েছিল। পরে বলেছে, এই গাড়ি সে কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু অনেক দামের জন্য কিনতে পারেনি।’

গাড়িটি কিনতে ব্যাংক লোন পাওয়ার চেষ্টার কথাও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন পরীমনি। গাড়িটি উপহার হিসেবে পাওয়ার কোনো তথ্য মিলেছে কি না, জানতে চাইলে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরাও এ বিষয়টি মাথায় রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করেছি কিন্তু এর সত্যতা পাইনি।’

পরীমনি যে সাদা রঙের হ্যারিয়ার গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন, সেটি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন করে কেনা বলে জানতে পেরেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ওই গাড়ির লোনসংক্রান্ত ব্যাংকের একটি নথিও পেয়েছে । সেখানে দেখা গেছে, গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৯৬৫৩) পরীমনি ও ব্র্যাক ব্যাংকের নামে এ/সি লোনে নথিভুক্ত।

সূত্রঃ নিউজবাংলা

Bootstrap Image Preview