অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শোবিজ জগতে একের পর এক অভিযান সেই বার্তাই দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে বাইরেও আলোচনা চলছে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা-মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। শোবিজ অঙ্গনের চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তথাকথিত কিছু সেলিব্রেটি সমাজে অপসংস্কৃতি ছড়াচ্ছে। তাদের মুখোশ উন্মোচনে কঠোর অভিযান চলছে। আশা করছি অন্যরাও সাবধান হবে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে তরুণ সমাজ ও জাতিকে যারা বিভ্রান্ত করছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অভিনয়-মডেলিং এগুলো আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিরই অংশ। যারা এগুলো চর্চা করেন তারা এই অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি জীবিকাও নির্বাহ করে।
কিন্তু এর আড়ালে কেউ যদি অবৈধ-অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তিনি যেই হোন, দায় তাকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, অনৈতিক বা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত যে কারও বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে। এতে পুরো অঙ্গনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, যেকোনো অন্যায়, অসংস্কৃতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় কঠোর। এদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে, থাকবে।
সম্প্রতি পরিচালিত কয়েকটি অভিযানে কথিত মিডিয়াব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর, চিত্রনায়িকা একা, মডেল কন্যা পিয়াসা ও মৌ গ্রেফতার হয়েছেন। বুধবার গ্রেফতার হয়েছেন নায়িকা পরীমনি এবং প্রযোজক নজরুল রাজ। অভিযানে এদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মডেল-নায়িকারা বাসায় মদের আসর বসাতেন। সেখানে আসত সমাজের নামিদামি ব্যক্তিরা। বড় লোকের সন্তানদের উপস্থিতি ছিল তাদের আসরে। মদ্যপান ও নাচ-গান চলাকালের দৃশ্য গোপনে ধারণ করতেন তারা। এরপর এসব ছবি কিংবা ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন। হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক ভালো। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও শোবিজ জগতের খ্যাতনামা প্রায় সব তারকা আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। বিভিন্ন সিটি নির্বাচন এবং উপনির্বাচনের প্রচারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে থাকে শোবিজ তারকারা।
আওয়ামী লীগও তাদের সঙ্গে সব সময় সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে। দলটির মনোনয়ন পেয়ে অনেক তারকা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমান সংসদেও আছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া দলটির সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটিতে মূল ধারার বেশ কয়েকজন তারকাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর শোবিজ জগতের কিছু তারকা রাতারাতি আওয়ামী লীগার হয়ে উঠেছেন। এদের অনেকেরই হাতে কোনো কাজ নেই। নাটক সিনেমা কোনো কিছুই নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, কর্মসূচিতে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এসব তারকা আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গিয়ে তদ্বির করেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, যেসব তারকা এ ধরনের কর্মকাণ্ড জড়িত তারা কেউই হালের জনপ্রিয় তারকা নন। আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করেই তারা ফুলেফেঁপে উঠছেন। তাদেরকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদেরকে দলের পদ-পদবি দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, অপসংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনো সমর্থন করে না। আমরা চাই এগুলো বন্ধ হোক। আওয়ামী লীগ এ ধরনের পদক্ষেপের পক্ষে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিরা প্রগতিশীল মানুষ। আমরা চাই না কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হোক। তবে কিছু মানুষ সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চা করছে। এটা তো বন্ধ করতে হবে। তাই অভিযান চলুক, এটা আওয়ামী লীগ চায়।