Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ সোমবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঈদের দ্বিতীয় দিনে লবণ সংকটে পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা, চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২১, ০২:০৩ PM
আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১, ০২:০৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে লবণ সংকটে পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা। লবণের ব্যবস্থা করতে না পেরে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা। দ্বিগুণ দাম দিয়েও লবণের ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা।ফলে অনেক কোরবারির পশুর চামড়া নষ্ট হওয়ার পথে।

এদিকে দ্বিতীয় দিনে কোরবানি হওয়া পশুর চামড়াও আসতে শুরু করেছে পোস্তায়। এ মুহূর্তে লবণের ব্যবস্থা না হলে অনেক চামড়া সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীদেরও গুণতে হবে লোকসান।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাজধানীর লালবাগের পোস্তা ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টার পরে হঠাৎ করে চামড়ার আমদানি বেড়ে যায়। আর চামড়ার দামও নাগালে থাকায় যেসব ব্যবসায়ীর ৫০০০ পিস চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তারা কিনেছেন ৭ হাজার পিস চামড়া। কিন্তু তার লবণ মজুদ ছিল ৫ হাজার পিসের জন্য। ফলে তার অতিরিক্ত লবণের প্রয়োজন পড়েছে। এখন দ্বিগুণ দাম দিয়েও লবণ পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। বেশি দাম দিয়ে হলেও লবণ কিনতে হবে। তা না হলে দাম দিয়ে কেনা চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে।

ছমির হানিফ অ্যান্ড সন্সের মালিক হাজী মো. ছমির উদ্দিন বলেন, ৪৬ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। এরকম লবণের দাম দেখি নাই। ৬৮০ টাকার ৭২ কেজির এক বস্তা লবণ এখন কিনতে হচ্ছে ১৩৫০ টাকা দিয়ে। দ্বিগুণ দাম দিয়ে লবণ কিনে চামড়া থেকে লাভ করবো কীভাবে?

লবণের সংকট হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০ হাজার পিস। আমাকে কিনতে হয়েছে ১২ হাজার পিস। মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে যখন বলে তখন আর না করতে পারি না। এ বছর গত বছরের থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে চামড়া কিনেছি। গত বছর যে চামড়া কিনেছি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এ বছর সেই চামড়া কিনতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

পোস্তার আড়তদার মেসার্স আমান উল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদাসের প্রোপ্রাইটর হাজী মো. আমান উল্লাহ বলেন, গতকাল রাতে হঠাৎ চামড়ার আমদানি বেড়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদকৃত লবণ রাতেই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে ব্যবসায়ীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে লবণের জন্য। যাদের টাকা আছে অনেকেই দ্বিগুণ দামে লবণের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যাদের কাছে টাকা নেই তারা এখনও লবণের ব্যবস্থা করতে করতে পারেননি। ফলে কিছু চামড়া নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হাইন্ড অ্যান্ড স্কিন রিটেইল ডিলার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. শামীম বলেন, আমরা সবাই লবণ মজুদ করেছি। কিন্তু আমদানি বেশির কারণে অতিরিক্ত লবণের প্রয়োজন হয়। এখন হাতে টাকা নাই লবণের দামও দ্বিগুণ হয়েছে। কোথাও লবণ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে লবণের ব্যবস্থা করতে না পারলে দাম দিয়ে কেনা চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। শিল্প মন্ত্রণালয় যদি পোস্তার জন্য আলাদা করে লবণের ব্যবস্থা করতো তাহলে এ অবস্থা হতো না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, রাতে প্রচুর চামড়া আমদানি হওয়ায় মজুদকৃত লবণের সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে লবণ আনার জন্য চেষ্টা করছি। অনেক লবণ ইত্যোমধ্যে চলে এসেছে। তবে লবণের দাম হঠাৎ দ্বিগুণ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন। চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ হলো লবণ। লবণ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণ করা যায় না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে আরো তদারকি করতে হবে।

এ বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গত বছর যা ছিল ৩৫ থেকে ৪০টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে গত বছর যা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা। গত বছর যা ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। গত বছরের চেয়ে খাসির চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, গত বছর যা ছিল ১০ থেকে ১২ টাকা।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

এদিকে টানা তিন বছরের বিপর্যয় থেকে কাঁচা চামড়ার বাজারকে রক্ষা করার সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল এবার। কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় তার ফলও পাওয়া যাচ্ছিল। বিশেষ করে গত দুই বছর কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে যে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, এবার তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সরকার গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা করে বাড়ানোর ফলে বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে।

বুধবার (২১ জুলাই) ঈদুল আজহার দিনে রাজধানীর পোস্তা এলাকার আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। অবশ্য কিছু সাধারণ ও মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করলেও আড়তদারদের মতে চামড়ার দাম তেমন কমেনি।

Bootstrap Image Preview