Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রহস্যে ঘেরা তুষ্টির মৃত্যু: চাচাতো ভাই করলেন মামলা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২১, ১১:০৪ AM
আপডেট: ০৭ জুন ২০২১, ১১:০৪ AM

bdmorning Image Preview


চার ভাই-বোনের মধ্যে ইসরাত জাহান তুষ্টি ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাই মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। সবার ছোট ভাইয়ের বয়স ৬ বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবা করা 

ছিল তুষ্টির স্বপ্ন। বড় ভাই, বাবা-মা, চাচা সকলেই তুষ্টিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। চুপচাপ এবং শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছে ছিলেন মধ্যমণি। তুষ্টির রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়টি মানতে পারছে না তার পরিবার এবং বাবা-মা। গত শনিবার ভোররাতে আজিমপুরের সরকারি কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে তুষ্টির লাশ উদ্ধার করা হয়।কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তার মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছেন সহপাঠীরা।

তুষ্টির বান্ধবী এবং রুমমেট ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহনুমা তাবাসসুম রাফি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তুষ্টি। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ৪২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। করোনার কারণে হল বন্ধ থাকায় সম্প্রতি আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ১৮ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে সাবলেট ভাড়া থাকতেন তারা।

তিনি বলেন, তুষ্টি এমনিতে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। খুব একটা আড্ডা-হইচই পছন্দ করতো না। গত শনিবার বিকালে স্থানীয় একটি দোকানে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে গেলে সামান্য বৃষ্টিতে ভিজেছিল। তুষ্টির আগে থেকেই ঠাণ্ডাজনিত অ্যাজমার সমস্যা ছিল। নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতো। রাতের খাবার খেয়ে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ি। বাথরুম কক্ষের বাইরে হওয়াতে তুষ্টি রাতের বেলা একা যেতে ভয় পেতো। অন্যান্য সময় রাতে আমাদের কাউকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ও বাথরুমে যেত। গত শনিবার ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি তুষ্টি কক্ষে নেই। বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। এ সময় বাথরুমে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাই। দরজায় একাধিকবার ধাক্কাধাক্কি করলেও ভেরত থেকে দরজা না খোলায় ভয় পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে দরজা ভেঙে তুষ্টিকে বের করেন। এ সময় তুষ্টি কোনো সাড়া দিচ্ছিল না। ঢাকা মেডিকেলে আনার পর চিকিৎসক জানান তুষ্টি আর নেই।

তুষ্টির বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বন্ধু সাফায়াত আহমেদ বলেন, বাথরুমের দরজা ভেঙে তুষ্টিকে বের করে হাসপাতালে আনা পর্যন্ত পুরো সময়টা আমি ছিলাম। ও খুব সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থী ছিল। পড়ালেখায়ও ছিল অসম্ভব ভালো। তুষ্টির গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া গ্রামে। বাবা মো. আলতাফ মিয়া পেশায় কৃষক হলেও পাশাপাশি ব্যবসা করেন। ওর মৃত্যুর বিষয়টি আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। তুষ্টির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা জানতে চাই। তুষ্টির মরদেহ নিতে আসা চাচাতো ভাই বলেন, তুষ্টির মৃত্যুর সংবাদে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে ওর বাবা-মা পাগলপ্রায় বলে জানান তিনি।

ঢামেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, তুষ্টির মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ রকম একজন সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

পলাশী ব্যারাক ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোর সোয়া ৫টায় ফোন পেয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাথরুমের দরজা ভেঙে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী সাড়া না দেয়ায় তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, তুষ্টির মৃত্যুর বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না অন্য কিছু, ফরেনসিক প্রতিবেদন পেলে আসল কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাই অপমৃত্যুর মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview