Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঢাকা থেকে সিলেটে নিয়ে শিল্পীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, মাকে জিম্মি করে ‘সমঝোতা’র নাটক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২১, ১১:২২ AM
আপডেট: ২২ মে ২০২১, ১১:২২ AM

bdmorning Image Preview


ঢাকার এক বাউল শিল্পীকে গানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিলেট নগরীর সাগরদিঘীরপাড় এলাকার একটি বাসায়। কিন্তু ওই বাসায় ছিল না কোনো গানের আয়োজন। ওখানে নেয়ার পর সিলেটের মাজার কেন্দ্রিক অপরাধ সিন্ডিকেটের সদস্য বাবুল মিয়াসহ তিনজন মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ‘সমঝোতা’ নাটক সাজায়। ওই বাউল শিল্পী ও তার মাকে জিম্মি করে কাগজে নেয়া হয় সইও। তবে, ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ধর্ষণকারীদের একজন শাহীন আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঢাকার চকবাজার এলাকার এক মহিলা বাউল শিল্পী সিলেটেও পরিচিত। মাজার কেন্দ্রিক ওরসে গান-বাজনায় ডাক পড়ে তার।এ কারণে সিলেটে প্রায়ই যাতায়াত করতেন। সিলেটের বাউল শিল্পীদের সঙ্গেও পরিচয় ছিল। সম্প্রতি মাকে নিয়ে সিলেটের মাজার এলাকায় আসেন ওই বাউল শিল্পী। তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ইদনের দরগাহ মহল্লার বাসায় ওঠেন। ওখানে ওঠার পর মাজার কেন্দ্রিক অপরাধচক্রের সদস্য বাবুল মিয়া তাকে একটি বাসায় গানের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। কথামতো তার আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে ১৯শে এপ্রিল বিকালে ওই বাউল শিল্পীকে গানের আসরের কথা বলে নগরীর সাগরদীঘিরপাড়ের ২৩ নম্বর বাসার নিচতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আটকে রেখে জোরপূর্বক তাকে বাবুল মিয়া, গোয়াবাড়ি এলাকার শাহীন আহমদ ও জালালাবাদ থানার দুসকি গ্রামের নিজাম উদ্দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনার পর মাজার কেন্দ্রিক অপরাধ সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য কয়েস মিয়া বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু এতে রাজি হননি ওই বাউল শিল্পী। তিনি ধর্ষণের ঘটনার বিচার চেয়ে ২২শে এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ওই বাউল শিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে আসামি শাহীন আহমদকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় বাবুল ও নিজামকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নগরীর সাগরদীঘিরপাড়ের ওই বাসার নিচতলায় কেউ থাকেন না। শাহীন মিয়া নিচতলায় একা থাকে। আর ওখানে প্রায় সময় মহিলাদের নিয়ে আসা হয়। ওখানে বাবুল, নিজামসহ আরো কয়েকজন প্রায়ই যাতায়াত করতো। এদিকে, মামলা দায়েরের পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মাজার কেন্দ্রিক অপরাধ সিন্ডিকেটের সদস্য কয়েস মিয়াসহ কয়েকজন উঠেপড়ে লাগে। তারা সিলেটে অবস্থান করা ওই বাউল শিল্পী ও তার মাকে জোরপূর্বক দরগাহ গেটের একটি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে জোরপূর্বক একটি কাগজে বাউল শিল্পীর সই নেয়।

এদিকে, ঘটনার পর পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন মামলার বাদী ওই বাউল শিল্পী। মামলার আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি বাবুল মিয়া তার ঠিকানা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুরে বলে উল্লেখ করেন। ধরাধরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা বাউল কল্যাণ সমিতি সিলেট বিভাগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন রাসেল। ধর্ষক বাবুল মিয়া তার গ্রামের নাম ব্যবহার করলেও তিনি তাকে চেনেন না বলে জানান। ধর্ষক বাবুলের তথ্য উদঘাটনে অনুসন্ধানে নামেন কামাল উদ্দিন রাসেল।

তিনি জানান, বাবুল মিয়া নামে তার গ্রামে কেউ নেই। বিষয়টি জানতে তিনি খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। জানতে পারেন ওই বাবুল মিয়া সিলেটের মাজার কেন্দ্রিক অপরাধী সিন্ডিকেটের সদস্য। সে এক সময় তার গ্রামের পূর্বপাড়ার টুনু মিয়ার কলোনিতে বসবাস করতো। এখন কোথায় বসবাস করে তিনি জানেন না। তার মূল বাড়ি ঢাকার ধামরাইয়ে। অনেক আগে থেকেই সে সিলেটে বসবাস করছে। বিশেষ করে সিলেটের মাজার কেন্দ্রিক মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। তার নেতৃত্বে মাজারে একটি অপরাধী চক্র রয়েছে। ওরা ঢাকা থেকে মাজারে আসা মহিলাদের ফুসলিয়ে সাগরদীঘিরপাড়ের ওই বাসাসহ আরো কয়েকটি স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে।

কামাল উদ্দিন রাসেল জানান, বাবুল চক্রকে শেল্টার দিতে আরো একটি চক্র রয়েছে। ওরাই মামলা দায়েরের পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সমঝোতার নাটক সাজিয়েছিল। ওই বাউল শিল্পীকে জিম্মি করে তারা স্বাক্ষরও নিয়েছে। পরে ওই বাউল শিল্পীকে জোর করে সিলেট থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে স্বস্তিতে নেই ওই বাউল শিল্পী। তিনি ঢাকায় ফিরে গেলেও তাকে ক্রমাগত হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি ধর্ষণের সময় ধারণ করা ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

ওই বাউল শিল্পী জানিয়েছেন, ওরা ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে দেয়ার কথা বলছে। এই অবস্থায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। মূল আসামি বাবুল ও তার সহযোগী বাবুল গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পাবেন না বলে জানিয়েছেন। এজন্য তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন।

সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইয়াসীন জানিয়েছেন, ওই বাউল শিল্পীর মামলা দায়েরের পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাগরদীঘিরপাড়ের বাসা থেকে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview