Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কক্সবাজারে স্বামী মৃত্যুর শোকে স্ত্রী তিমির আত্মহত্যা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০২:৫৪ PM
আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১, ০২:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


সম্প্রতি কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে সম্প্রতি পরপর দুদিন ভাসে আসে দুটি মৃত তিমি নানা আলোচনা উঠে এসেছে। ৯ ও ১০ এপ্রিল ভেসে আসা মৃত তিমি দুটি আলোড়ন তুলেছে বিশাল কাঠামোর কারণে।ঘটনাস্থলে গিয়ে তিমি দুটির শরীর পর্যবেক্ষণ, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করেছেন সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক। তিনি বলেন, গভীর পর্যবেক্ষণে তাঁর মনে হয়েছে মৃত তিমি দুটি ‘দম্পতি’ (কাপল)। পুরুষ সঙ্গীর মৃত্যুর শোকে স্ত্রী তিমিটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

৯ এপ্রিল সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে ১৫ টন ওজনের মৃত প্রথম তিমি। এটি লম্বায় ছিল ৪৪ ফুট, পেটের বেড় ২৬ ফুট। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। এটি স্ত্রী তিমি। এই তিমির শরীর পচে মাথার অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন সকালে একই সৈকতে ভেসে আসে ১০ টন ওজনের আরেকটি মৃত তিমি। এটি লম্বায় ৪৬ ফুট, পেটের বেড় ১৮ ফুট, ওজন প্রায় ১০ টন। এটি পুরুষ জাতের তিমি। মৎস্য বিজ্ঞানী আশরাফুল হক বলেন, মৃত তিমি দুটি ‘ব্রাইডস হুয়েল’ (Bryde’s Whale) অথবা ‘বলিন’ প্রজাতির।

সামুদ্রিক মৎস্য গবেষক, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গভীর সাগরে তিমি দুটির মৃত্যু হয়েছিল। জোয়ারের পানিতে ভেসে সৈকতে পৌঁছতে এত দিন সময় লাগে। এ কারণে তিমির শরীরে পচন ধরেছিল।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, সৈকতে আসা প্রথম তিমিটি স্ত্রী এবং দ্বিতীয়টি পুরুষ ছিল। পুরুষ তিমির শরীরে পচন ধরেছে বেশি, মারাত্মক ধরনের জখমের চিহ্নও ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে বড় কোনো জাহাজের ধাক্কায় পুরুষ তিমির মৃত্যু হয়।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, গভীর সমুদ্রে জোড় বেঁধে বিচরণের সময় বড় কোনো জাহাজের ধাক্কায় পুরুষ তিমিটি পেটে আঘাত পেয়ে মারা যায়। এ শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় স্ত্রী তিমিটি। এ ধারণার সঙ্গে একমত পোষণ করে আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিমির আত্মহত্যার ঘটনার অনেক নজির আছে। স্ত্রী তিমির শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু লেজের আগে পেটের দিকে পচে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।’

অন্য কোনো কারণে তিমির মৃত্যু হতে পারে কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেসে আসা দুই তিমির পেটে আমরা কোনো ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পাইনি। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়, এতে তিমিসহ যেকোনো প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে। কারণ প্লাস্টিক সহজে পেটে হজম হয় না।’ তিনি আরও বলেন, তিমি জোড় বেঁধে সাগরে বিচরণ করে। তিমি অনুভূতি ও বুদ্ধি সম্পন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী। জোড় বেঁধে সঙ্গী হয়ে চলার অভ্যাস তাদের মধ্যে আছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে দুটি বিশাল তিমি এভাবে সৈকতে ভেসে এসেছিল। কিন্তু তদন্ত হয়নি। দীর্ঘদিন পর আবার বিশাল দুটি মৃত তিমি সৈকতে ভেসে এল। এগুলোর মৃত্যু রহস্য উদ্‌ঘাটন জরুরি।

Bootstrap Image Preview