Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধর্ষণের কারণে যাবজ্জীবন, ছেলের উপস্থিতিতে ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেন আসামি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৪ PM
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


বিডিমর্নিং ডেস্কঃ ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আট বছর জেল খাটার পর ধর্ষিতার সম্মতিতেই কারাগারে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় দুই পরিবারের সদস্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলো ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া তাদের একমাত্র ছেলে।

জানা যায়, ২০১২ সালে দিলীপ খালকো (৩০) নামের সেই আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দিলীপের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী (২২) আদালতে বলেন, তারা বিয়ে করবেন। আসামিকে জামিন দিলে তার আপত্তি নেই। আর তাই আদালত কারাফটকেই তাদের বিয়ের আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ অনুযায়ী রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে দিলীপ খালকোর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের বিয়ের জন্য কনেসহ দুই পরিবারের অন্তত ১৪ জন কারাগারে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য।

কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নসিমনে চড়ে কারাগারের সামনে আসেন। এরপর তাদের কারা ফটকে ঢোকানো হয়। আগে থেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন হিন্দুবিবাহ রেজিস্ট্রার কৃষ্ণা দেবী এবং পুরোহিত পরিমল চক্রবর্তী। কনেপক্ষ আসার পর কারাগার থেকে বর দিলীপ খালকোকে আনা হয়। তারপর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিনিয়র জেল সুপার কনেকে একটি নতুন শাড়ি উপহার দেন। দুই পরিবারের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।

বিয়ের অনুভুতি জানিয়ে দিলীপ বলেন, বিয়ে করে ভালোই লাগছে। সবাই দোয়া করবেন যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি।

এদিকে কনে বলেন, আমরা চাই যেন বাকি জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারি।

সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, উচ্চআদালত আমাদের দিলীপের বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিন দিন আগে আদেশের কপি পাওয়ার পরই দুইপক্ষকে ডাকি। সুষ্ঠুভাবে বিয়েও সম্পন্ন হলো। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে।

দিলীপ কুমার ও ভিকটিম সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈহিক মেলামেশা করেন দিলীপ। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু এরপর থেকে দিলীপ আর বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সালিশ করার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করেন। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় হাজির হয়ে দিলীপ খালকোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন এক রায়ে দিলীপ খালকোকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

যখন ভিকটিম ধর্ষণের শিকার হন তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। কিন্তু সেই বয়সেই তার কোলে আসে পুত্র সন্তান। মেয়েটির আর পড়াশোনা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আদিবাসী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই মেয়েটি কৃষিশ্রমিক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করে। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তার সন্তান। তার সন্তানের বয়স এখন আট বছর। দিলীপেরও আট বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এতদিন পর দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। কনের সম্মতিতেই আদালত তাদের বিয়ের আদেশ দেন। এখন বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে গেলে জামিন পেতে পারেন দিলীপ খালকো।

Bootstrap Image Preview