আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানের আদালতেও বঙ্গবন্ধু মাথা উঁচু করে চলতেন। জেলখানা থেকে তাকে যখন আদালতে নেয়া হতো তখন তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতেন।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না । বঙ্গবন্ধুর দেয়া আলোকবর্তিকা আজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যে সোনার বাংলার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলেন আমরা তা বাস্তবায়ন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশকে স্বাধীন করার। শত্রুকে মোকাবিলা করার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তার নির্দেশ পালন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যার কাছে যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদাররা হামলা শুরু করেছিল, ঠিক তখনই জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করেছিল। কিন্তু পাকিস্তানিরা এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দেন বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে দিল্লি যান। যেহেতু ভারত আমাদের দেশ স্বাধীন করার বিষয়ে সকল দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছিল, সে কারণে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কিন্তু সে স্বাধীনতা যেন অপূর্ণ ছিল। কারণ সারা বাংলাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত ছিল, বিজয় উল্লাস করছিল, তখনও আমরা বন্দি ছিলাম। আমি, আমার মা, আমার বোন রেহানা, ছোট্ট শিশু রাসেল ও জয় আমরা সবাই বন্দিখানায় ছিলাম। সেখান থেকেই আমরা শুনেছি চারিদিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং বিজয়ের উল্লাস। আমরাও সেদিন ভেতর থেকে সেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছি । ১৭ ডিসেম্বর আমরা মুক্তি পাই, আমরা তখন দেখেছি মানুষের চোখেমুখে অশ্রু, বিজয়ের হাসি, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন, স্বজন হারানোর ব্যথা। দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে যে কখন আসবে তাদের সেই প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফেরার প্রতীকী অবতরণ দেখে কেঁদেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাঁদের তার বোন শেখ রেহানাও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি প্রতিবছরই উদযাপন করে বাঙালি জাতি। কিন্তু এবারই প্রথম ব্যতিক্রমী উদযাপনে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর সেই প্রত্যাবর্তনের দৃশ্য প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা দেখে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাসহ সবার মধ্যেই একটি আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।
প্যারেড গ্রাউন্ডে আরও উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১২ হাজার দর্শক।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ঐতিহাসিক এই দিনটিতেই মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এই আয়োজনের মূল অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয় তত্ত্বাবধান করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একটি বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের গত সরকারের ১০ জন মন্ত্রী, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দুজন সাবেক গভর্নর, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী।