Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিয়ে নিয়ে দ্বন্দ্বে ছেলের হাতে প্রাণ গেল মা-বাবার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:১১ PM
আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:১১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


যশোরের চৌগাছায় ছেলের হাতে নৃশংসভাবে বাবা-মা খুন হয়েছে। ধারালো গাছিদা দিয়ে প্রথমে পিতা মহিউদ্দীন (৬৫) ও মা আয়না বেগমকে (৫২) কুপিয়ে হত্যা করেছে ছেলে মিলন হোসেন।

ঘটনাটি ঘটেছে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। বাবা মাকে হত্যার পর দ্রুত পালিয়ে যাবার সময় অভিযুক্ত মিলনকে স্থানীয়রা ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠপাড়ার বাসিন্দা মিলন হোসেন তার পিতা মহিউদ্দীন (৬৫) ও মা আয়না বেগম (৫২) কে গাছিদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিফাত খান রাজিব জানান, তার কাছে খবর আসে রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এক সন্তান তার পিতামাতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। খবর জানার সাথে সাথে ঘটনাস্থালে যাই। টিনসেড দিয়ে তৈরি শোবার ঘরের পশ্চিমপাশে টিউবওয়েলের সন্নিকটে রক্তাক্ত অবস্থায় মহিউদ্দীনের লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার গলা ও দুটি হাতে বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরপাশেই তার স্ত্রী আয়না বেগমের লাশ রক্তাক্ত অবস্থা পড়ে আছে। আয়না বেগমের গলা ও শরীরের সজোরে আঘাদের চিহ্ন বিদ্যমান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানতে পেরেছি, নিহতদের বড় ছেলে অভিযুক্ত মিলন হোসেনের সাথে তার পিতামাতার ঝগড়া হয়। ছেলের বিয়ে দেওয়া নিয়ে পিতামাতার সাথে কথাকাটির একপর্যায় ধারাল দা দিয়ে প্রথমে পিতাকে কুপিয়ে আহত করে। এ অবস্থায় মা ঠেকাতে আসলে তাকেও সজোরে কপাতে থাকে। পিতামাতাকে কুপিয়ে মিলন পালিয়ে যায়। পড়ে জনগণের সহযোগিতায় মিলনকে গ্রেপ্তার করি।

রামকৃষ্ণপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর তারিখ হাসান জানান, ইউনিয়ন পরিষদে কম্বল বিতরণ করছিলাম। এ সময় ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি মিলন তার বাবা মাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর কামাল হোসেন জানান, রক্তমাখা জামা পরে মিলন গোপিনাথপুর গ্রামের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে মিলনকে চলে যেতে দেখে থামতে বলি। কিন্তু আমার কথা শোনার পর দৌঁড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তাকে ধরে ফেলি।

রামকৃষ্ণপুর মাঠপাড়ায় নিহত মহিউদ্দীনের বাড়ি। বাড়ির পূর্বপাশে হক সাহেবের বাড়ি ছাড়া আশপাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। চারিপাশে মেহগনি বাগান রয়েছে। মাঠের মধ্যে এই দুটি বাড়ি টিন দিয়ে আবদ্ধ। এলাকাবাসী জানায়, নিহত মহিউদ্দীনের ২টি মেয়ে ও ২টি ছেলে সন্তান রয়েছে। মেয়ে ববিতা খাতুন ও মিনা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। ছেলের মধ্যে মিলন বড়। আর ছোট ছেলে হুমায়ুন যশোর এম এম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ে। নিহত মহিউদ্দীনের তেমন কোনো জায়গা জমি নেই। তিনি অন্যের জমি নিয়ে চাষ করেন। শীত মৌসুমে খেঁজুর গাছ বর্গা নিয়ে গুড় পাটালি তৈরি করে বর্তমানে সংসার চালাচ্ছেন।

জেলা পরিষদ সদস্য ও রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান হবিবর রহমান হবি জানান, মিলন হোসেন তেমন কাজকর্ম করে না। বাড়িতে টাকাপয়সা নিয়ে মাঝেমাঝে পরিবারে দ্বন্দ্ব হয়। এই দ্বন্দ্বের কারণে তারা হত্যার শিকার।

স্থানীয়রা জানান, মিলন হোসেন বদমেজাজি ছিল। ইতোপূর্বে গ্রামের খাইরুল হোসেনকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এ ঘটনায় তার নামে মামলা হয়। এই মামলায় মিলন জেল খাটে। বর্তমানে তার মামলা চলছে। এ ছাড়া তার পিতাকে বছরখানিক আগে ধারাল দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সে সময় তার পিতা অল্পের জন্য রক্ষা পান।

এদিকে নৃশংস এমন দুটি হত্যাকাণ্ডে এলকার মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে। গোটা এলাকা শোকের ছায়া মেনে এসেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনো থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে।

 

Bootstrap Image Preview