Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরই বুঝবি’ বলেই ভিপি নুরকে মারধোর শুরু

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:০২ PM
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:০২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নূরুল হক নূরের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডাকসু ভবনের ভেতরে ও বাইরে ভিপি নূর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করা হয়। এতে নুরসহ ২৬ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তুহিন ফারাবীর অবস্থা গুরুতর।

এ হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে তিন ছাত্রলীগ নেতার নাম আসছে। ভিপি নুরের অভিযোগ ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত এবং সাধারণ সম্পাদক ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন এ হামার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ডাকসু ভবনের দিকে যায়। একই সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ২০-২৫ জনকে নিয়ে ভিপি নূর ডাকসু ভবনের দিকে যান।

একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় এবং ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে ভিপি নূর চলে যান। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনের গোলঘরে জড়ো হন। কিছুক্ষণ পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ডাকসু ভবনের সামনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজীত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন।

দুটি সংগঠনের কর্মীরা তখন ডাকসু ভবনের দিকে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এ সময় ভিপির নির্দেশে ডাকসু ভবনের কর্মীরা ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম গিয়ে ডাকসুর গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সনজিত। ভিপির কক্ষে প্রবেশ করে সাদ্দাম জানতে চান, কেন বহিরাগতদের নিয়ে তিনি (ভিপি নূর) ডাকসুতে এসেছেন। তখন নূর বলেন, তিনি সব সময় হামলার আশঙ্কার মধ্যে থাকেন। এ কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য অনেককে সঙ্গে রাখেন।

একপর্যায়ে সনজিতকে উদ্দেশ করে নূর বলেন, ‘আপনি তো ডাকসুর কেউ নন। আপনি কেন এখানে এসেছেন।’ তখন সনজিত বলেন, ‘আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরই বুঝবি।’ ছাত্রলীগের দুই নেতা যখন কথা বলছিলেন, তখন তাদের অনুসারীরা নূরের সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে মারতে শুরু করে।

সনজিত ও সাদ্দাম বের হওয়ার পর সেখানে দফায় দফায় হামলা করা হয়। ভিপির কক্ষে কয়েকজনকে আটকে রেখে ও লাইট বন্ধ করে মারধর করা হয়। হামলায় মারাত্মক আহত হন ভিপি নূর। তিনি কয়েকবার বমিও করেন। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ডাকসু ভবনের বাইরে এনেও হামলা করা হয়।

ঘটনার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ভিপি নূর ছাড়া আহত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান, কবি নজরুল কলেজের ছাত্র রুকমিয়া হোসেন রাজ, গোলাম কিবরিয়া, জাহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মশিউর রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তুহিন ফারাবি। এছাড়া আমিনুর নামে আরেকজন আহত হন। তিনি নিজেকে নূরের ছোট ভাই বলে দাবি করেন।

এদিকে হামলার দায় অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনাকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নূরের সংগঠনের রেষারেষি বলে উল্লেখ করে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটুক। কয়েকদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও শিবির সংশ্লিষ্টদের ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা দেখছি। আজকেও ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। আমরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা দুই পক্ষকে আহ্বান জানাই তারা যেন নিজেরাই সমস্যার সমাধান করে নেন।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকজনের ছবি দিয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত লিখেছেন, ‘বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা ও অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিলেন পাগলা নূরা, সচেতন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বাধীনতাবিরোধীদের সমুচিত জবাব দিয়েছে। এ ক্যাম্পাসে কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর জায়গা হবে না। নুরের নাটক সবাই বুঝে গেছেন।’

এ ঘটনার পর ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নূর নিজের দুর্নীতি ঢাকতে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুকে ব্যবহার করে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। বহিরাগতদের সঙ্গে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তিনি সকাল থেকে ডাকসুতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।’ রাব্বানী আরও বলেন, ‘নূরকে ঢাবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। ডাকসুর বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’

 

Bootstrap Image Preview