Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৫ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের এক সভায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় আসলো তা রহস্যজনক। এসময় বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, তালিকা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এটা খুব খারাপ কাজ হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধে যারা গিয়েছিল তাদের সকলের নামের তালিকা করে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে সে সময় অনেকগুলো মামলা দেয় পাকিস্তান সরকার। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওই তালিকা থেকে ধরে ধরে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এরশাদের সময়ে একটা তালিকা বের হলো, সেখানে এক নম্বর আসামি জিল্লুর রহমান (সাবেক রাষ্ট্রপতি) আর দ্বিতীয় হামিদ সাহেব (বর্তমান রাষ্ট্রপতি)। পরবর্তীতে দেখা গেল, পাকিস্তান আমলে যে তালিকা হয়েছে, সেটাই রয়ে গেছে। নথি তো থেকে যায়।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে, সেখানে সবমিলিয়ে একটা গোলমাল করে ফেলেছে। সেখানে অনেকের নাম চলে এসেছে, যারা মুক্তিযোদ্ধা। সেখানে কিন্তু এক হাজারের মতো নাম দেওয়া ছিল। এটা একটা রহস্য। আসলে রাজাকারদের যেটা তালিকা, সেটা কিন্তু গেজেট করা ছিল। ওই গেজেট থেকেই তালিকা নিয়ে আমাদের বিচার কাজ চলেছে। কাজেই এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি, সমস্ত ফাইল খুলে দেখতে। খুব খারাপ একটা কাজ হয়ে গেছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম সেখানে ঢুকে গেছে। ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সে তালিকা ব্যবহার করেছে। যারাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে তাদেরকে তারা সন্ত্রাসী হিসেবে বা বিভিন্ন অভিযোগে তালিকাভুক্ত করে মামলাও দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই যে তালিকাগুলো সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ব্যবহার করেছে এটা করতে গিয়ে এখানে একটা গোলমাল করেছে। ঠিকভাবে নামের ওপরে কী আছে না দেখে ওয়েবসাইটে দিয়ে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আমি এখানে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার খেতাব দেয়া হবে না। এটা হতে পারে না, এটা অসম্ভব। এটা আমরা হতে দেব না।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা রাজাকার, তাদের তো আলাদা গেজেট করাই আছে। কোনোভাবেই এটা রাজাকারের তালিকা না। এটা যারা দেখেছেন তাদের সকলের কষ্ট লেগেছে, মনে আঘাত লেগেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করল তাদেরকে যদি রাজাকার বলা হয় এর থেকে দুঃখের, কষ্টের আর কিছু থাকে না। যারা এ দুঃখ পেয়েছেন তাদেরকে আমি বলব, তারা যেন শান্ত হন। রাজাকার, আলবদর এবং আল শামস এ তালিকাগুলো কিন্তু গেজেটেড। এগুলো আপনারা যদি একাত্তরের পত্রিকাও দেখেন সেই পত্রিকায়ও কিন্তু লিস্ট একটা আছে।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশে রাজাকাররা ক্ষমতায় এসে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে শুরু করল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দেওয়া হলো। আমরা সেই জায়গা থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি এবং সেখানে আরও অনেক কাজ বাকি। এটা নিয়ে যারা কষ্ট পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন তাদেরকে বলব, দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। যারা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদের পরিবার, তারা সব সময় আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয় এবং জাতির কাছে শ্রদ্ধেয় থাকবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। একটা অন্ধকার যুগ আমাদের চলে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে একেবারে ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত সেই কালো অধ্যায় কেটে গেছে। কাজেই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করেছি। এটা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা হবে। আর যারা প্রকৃত দোষী অবশ্যই এটা তাদের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা করা হবে।

এর আগে বুধবার বিকেলে সদ্যপ্রকাশিত রাজাকারদের তালিকা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তালিকাটি তুলে নেয়া হয়েছে।

তালিকা স্থগিতের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। যাচাই বাছাই করে আগামী ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মহান বিজয় দিবসের আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

Bootstrap Image Preview