Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হঠাৎ সেই রুমঝুমের বাড়িতে হাজির ডিসি-এসপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০১ PM
আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০১ PM

bdmorning Image Preview


পথের ধারে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু রাজকুমারী রুমঝুমকে দেখতে তার বাড়ি হাজির হলেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন মালা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

সোমবার দুপুরে তারা শিশুর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানার ভিতরগর এলাকায় যান। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও সঙ্গে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকের।

শিশু রুমঝুমকে দেখে এসে বিকেলে নিজের ফেসবুক ওয়ালে অনুভূতি প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। পাঠকের জন্য জেলা প্রশাসকের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু (পরিমার্জিত) তুলে ধরা হলো।

পথের ধারে কুড়িয়ে পাওয়া অমূল্য রতন রাজকুমারী রুমঝুম। ছোট্ট বুকটা কি পাষাণভার সইলো। হাসপাতালে বিছানায় একাকি শুয়ে পার করলো কয়েকটা দিন। অন্য মায়েদের বুকের দুধ পান করলো শুধু টিকে থাকার প্রত্যয়ে। আর আঁকুপাঁকু করে মাকে খুঁজলো। তার মাকে খোঁজাটা আমরা অনুভব করতে পেরেছিলাম। তাইতো দেশ-বিদেশের অনেক সুহৃদ-শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে দত্তক নিতে চাইলেও আমরা তাকে কারও হাতে তুলে দিতে পারিনি। বরং খুঁজে বের করা হয়েছে তার মাকে। পুলিশ এক্ষেত্রে অসাধ্য সাধন করেছে। অবশেষে আমরা তাকে তার মায়ের কোলে তুলে দিতে পেরেছিলাম।

অদ্ভূত এক মায়ায় সে বেঁধে ফেলেছে আমাদের। আজ পুলিশ সুপার, এডিএম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও সদরসহ কন্যাকে আবার দেখতে গেলাম তার বাড়ি। রাজকুমারী হয়তো রাজপ্রাসাদে নেই, তবে মায়ের কোলে আছে। নিরাপদে আছে। আল্লাহ তাকে হেফাজতে রাখুন।

গত ২২ অক্টোবর পঞ্চগড়ের ১৮ দিন বয়সী শিশু রুমঝুম মায়ের কোলে ফিরেছে। ওই রাতে শিশুটিকে তার মা রিমু আক্তারের কোলে তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন।

এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির জন্য পোশাক, প্রসাধনী, শীতের কম্বল তার পরিবারের জন্য শুকনো খাবারসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন শিশুটির নাম রাখেন রাজকন্যা রুমঝুম। এ সময় শিশুটির মাসহ তার পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসকের দেয়া নামটি রাখতে হাসিমুখে সম্মত হন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুটিকে হস্তান্তরের সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সিভিল সার্জন নিজাম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান, শিশুটির নানা আইবুল ইসলাম, নানী শিল্পী বেগমসহ স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েকে কোলে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির মা রিমু আক্তার। পরে তিনি শিশুটিকে এভাবে ফেলে যাওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সবার কাছে ক্ষমা চান। এরপর হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তারা শিশুটিকে তার নানাবাড়ি সদর উপজেলার ভিতরগড়ে চলে যান।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, শিশুটির মাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকা প্রশংসনীয়। সব দিক বিবেচনা করেই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হলো। একই সঙ্গে শিশুটিকে যাতে ভালোভাবে দেখভাল করা হয় এ জন্য শিশুটির মাসহ তার পরিবারের কাছে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

স্বামীর সঙ্গে সাংসারিক টানাপোড়েনে শিশুটিকে দত্তক দিতে চেয়েছিলেন মা রিমু আক্তার। কেউ নিতে আগ্রহ না দেখায় তাকে জেলা শহরের কামাতপাড়া মহল্লার একটি গলিতে শিশুটিকে ফেলে যান তার মা রিমু আক্তার। ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এসময় অনেকে তাকে দত্তক নিতে হাসপাতালে ভিড় জমান। ২১ অক্টোবর আটোয়ারী উপজেলা মালিগা থেকে মা রিমু আক্তারকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে আবারও শিশুটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

Bootstrap Image Preview