সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বরের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে আটকে অভিযান শুরু করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এর মধ্যেই তিনি কৌশলে ঢাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি পাগলা মিজানের। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ভোরে শ্রীমঙ্গলের কলেজ গেট এলাকায় বান্ধবীর বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, মিজান সীমান্ত এলাকা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মিজানের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে হাবিবুর রহমান মিজানকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। বিষয়টি টের পেয়ে গত দু-তিন দিন আগে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান তিনি।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক তদন্তে মিজানের যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দু’টি বাড়ি এবং বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। মিজান অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ থেকেই এসব সম্পদের মালিক হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
সারওয়ার আলম বলেন, মিজানের বাসা তল্লাশি করে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার মূল্যের বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, এক কোটি টাকার এফডিআরের কাগজ উদ্ধার করা হয়। এসব টাকার কোনও উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। কাউন্সিলর হিসেবে সরকার থেকে সম্মানী বাবদ মাসিক বেতন ছাড়া আমরা তার দৃশ্যত কোন ব্যবসার খোঁজ পাইনি।
তিনি জানান, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মিজান প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে গেল দুইদিনে ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিল তবে সেই টাকা কোথায় রেখেছেন এখনও তারা জানতে পারিনি।
মিজানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে চাঁদাবাজির ছাড়া জমি দখলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে মিরপুরে হোটেল বয়ের কাজ নেন মিজান। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন মিজান। ১৯৮৯ সালে ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও ছিলেন তিনি। সময়ের বিবর্তনে একসময় পাল্টে ফেলেন রাজনীতিরও খোলস, ফ্রিডম পার্টির নেতা থেকে হন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। আওয়ামী লীগের ব্যানারে সক্রিয় রাজনীতির বদৌলতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়ে যান তিনি। এর আগেই তিনি নেতাদের আশীর্বাদে মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম।