Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

অমিত সাহা-তোহা পাঁচদিনের রিমান্ডে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:১৩ PM
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:১৩ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা ও বুয়েটের শিক্ষার্থী হোসেন মোহাম্মদ তোহার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শুক্রবার তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে অমিত সাহা ও বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে তোহাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। অমিত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র। হোসেন মোহাম্মদ তোহা বুয়েটের এমই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি এ মামলার মামলার ১১ নম্বর আসামি।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে আলোচনার শীর্ষে আছেন অমিত সাহা। সব ছাত্রছাত্রীর মুখে তার নাম। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক তিনি। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি। তার কক্ষেই ডেকে নিয়ে প্রথমে পেটানো হয়।

আবরার হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, সেই অভিযোগ দু’দিন ধরেই করে আসছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, আবরার ফাহাদ হলে আছেন কিনা সে বিষয়ে প্রথম খোঁজ নিয়েছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত সাহা আবরারের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে ‌‘আবরার ফাহাদ হলে আছে কিনা’ মেসেজ দেন।

মেসেজের এক ঘণ্টার মধ্যেই শেরেবাংলা হলের ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ২০১১ নম্বর কক্ষে এনে তাকে লাঠি, চাপাতি ও স্টাম্প দিয়ে পেটায়।

সূত্র বলছে, ৬ আগস্ট রাতে অমিত সাহার রুমে প্রথম দফায় মারধরের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। তার সঙ্গে মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ও উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।

পরে যোগ দেন অনিক, জিয়ন, মনির ও মোজাহিদুলসহ অন্যরা। প্রথম দফায় মারধর চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এর পর রাতের খাবার খাওয়ানো হয় আবরারকে। খাওয়ানো হয় ব্যথানাশক ট্যাবলেটও। দেয়া হয় মলম। দ্বিতীয় দফা মারধর শুরুর সময় অনিক ছিলেন সবচেয়ে মারমুখী।

আবরার এ সময় বারবার বমি করছিলেন। একপর্যায়ে তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্নার কক্ষে। সেখানে আবরারের শরীরের ওপর অনিক ক্রিকেট স্টাম্প ভাঙেন। পরে আরেকটি স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। তৃতীয় দফার মারধর শুরু হয় মুন্নার কক্ষে। তখন মধ্যরাত।

নির্মম পিটুনিতে আবরার লুটিয়ে পড়েন। এর পর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা। মাঝ সিঁড়িতে যেতেই তারা বুঝতে পারেন আবরার মারা গেছেন। সিঁড়িতেই মরদেহটি রেখে তখন ওই স্থান ত্যাগ করেন তারা।

রিমান্ডে ১২ জন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আরো ১২ জন রিমান্ডে রয়েছেন। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাতুল ইসলাম জিওন, গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, ছাত্রলীগ কর্মী মুনতামির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মোজাহিদুর রহমান, মেহেদী হাছান রবিন,শামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১) ও মো. আকাশ (২১)।

জবানবন্দি দিয়েছেন ইফতি মোশাররফ সকাল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে ডেকে নিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকালসহ মামলার এজাহারভুক্ত ও অন্যান্য আসামিরা ক্রিকেটের স্টাম্প এবং লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করেন। মারধরের ফলে আবরার মারা যান।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) আসামি ইফতি ঘটনার সত্যতা প্রকাশসহ ঘটনার বিষয়ে নিজ ইচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

জবানবন্দি দেয়ার আগে ইফতিকে আদালতে হাজির করে আসামিকে কোর্টে প্রেরণ ও জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। আবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে বলেন, আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল ৬ অক্টোবর আবরার ফাহাদ রাব্বীকে বুয়েট শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুম থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যান। পরের দিন (৭ অক্টোবর) হলের ২০১১ নম্বর রুমের ভেতরে নিয়ে ইফতিসহ মামলার এজাহারভুক্ত ও অন্যান্য আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেটের স্টাম্প ও লাঠিসোটা দিয়ে আবরারের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করেন। মারধরের ফলে তিনি মারা যান।

প্রসঙ্গত, রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন পিটিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় বুয়েটের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।

Bootstrap Image Preview