Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ শনিবার, মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তিস্তার পানি না দিলেও ফেনী নদীর পানি পেল ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫১ AM
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫১ AM

bdmorning Image Preview


বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আশাব্যঞ্জক কোনো আলোচনা হয়নি নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে। দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষিত তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ২০১১ সালের একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামোর কথা শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দিলেও অতীতের অজুহাত দেখিয়ে দায় সেরেছেন নরেন্দ্র মোদি। বরং উল্টো এখন ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানীয় হিসেবে সরবরাহে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।

শনিবার (৫ অক্টোবর) নয়াদিল্লীর হায়দ্রাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।

২০১৭ সালের পর এই প্রথম নয়াদিল্লি সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটিই প্রথম ভারত সফর।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাধার মুখে অতীতে বেশ কয়েকবার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা চূড়ান্ত পরিণতি পায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরেও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কোনো সমঝোতা কিংবা চুক্তি সই হয়নি।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের সরকার একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামোয় একমত হয়েছিল। এই চুক্তির বাস্তবায়ন জানার জন্য বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

জবাবে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিস্তা চুক্তি যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা যায়; সে লক্ষ্যে বিজেপি সরকার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে নিরন্তর কাজ করে চলছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুই দেশের কর্তৃপক্ষের মধ্যে দরকষাকষি হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কেউই। বরং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা তিস্তার বিকল্প হিসেবে অন্য নদীর পানি নিয়ে আলোচনা কিংবা সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও সেসব প্রস্তাবও আলোর মুখ দেখেনি।

দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা ছাড়াও আরো ছয়টি অভিন্ন নদী মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমারের পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে শিগগিরই একটি খসড়া কাঠামো প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। এই খসড়া কাঠামো প্রস্তুত করতে যৌথ নদী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের অনুমতি ছাড়াই কয়েক বছর ধরে ফেনী নদী থেকে ভারত পানি উত্তোলন করছে। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে সীমান্তের জিরো লাইনে পাম্প বসিয়ে নদীটি থেকে পানি উত্তোলন করছে নয়াদিল্লি। পানি উত্তোলন না করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সেই ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামো তৈরি করতে যৌথ কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এখন এই ফেনী নদী থেকেই ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নিয়ে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুম শহরের জনগণের জন্য সরবরাহে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।

তিস্তা চুক্তির বিষয়টি আড়ালে থাকলেও দুই দেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, সাতটি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক একটি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তিস্তার পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে এ কাঠামো অনুস্মরণ করা হতে পারে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। এর মধ্যে পানিবণ্টন চুক্তি আছে শুধু গঙ্গা নিয়ে। সেই গঙ্গা চুক্তিতে ন্যায্যতা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিচুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা ভারতের অথচ কোনো কোনো বছর মাত্র দেড় হাজার কিউসেক পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে পাঁচ দশক ধরে। সর্বশেষ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তিতে রাজি হলেও তিস্তার পথে এখন বাধা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসেছে। রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও এখনো প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভারতের শক্তিশালী সমর্থনের ব্যাপারে অনেকে আশাপ্রকাশ করলেও আপাতত তাতেও হতাশ হতে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দেয়া যৌথ বিবৃতিতে এবার রোহিঙ্গা শব্দটিও উচ্চারণ করা হয়নি।

সম্প্রতি ভারতের আসাম প্রদেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) করায় সেখানকার ১৯ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছেন; যাদের অনেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন সময়ে দাবি করেছেন। এমনকি এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোরও হুমকি এসেছে প্রায়ই।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের ফাঁকে একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেই বৈঠকে এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু শনিবার নয়াদিল্লিতে বৈঠকের পর যে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতে এনআরসি শব্দটিরও উল্লেখ নেই।

যৌথ ইশতেহার থেকে আরও জানা গেছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয় কোনো মন্তব্য করেননি। এমন কি ভারত রোহিঙ্গা শব্দও উচ্চারণ করেনি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী হিসেবে বলা হয়েছে। মিয়ানমার সরকারও রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে না। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য যৌথ ইশতেহারে খুজে পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও মানবিক সহায়তা (ত্রাণ) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত।

Bootstrap Image Preview