Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ শনিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

১০০ তরুণী সেলিমের সঙ্গী, রাশিয়া-জাপানেও স্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০১ PM
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


সময় যতই যাচ্ছে একের পর বেরিয়ে আসছে সেলিম প্রধানের অপকর্মের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনার গডফাদার সেলিম দীর্ঘ ৩০ বছরে তার অপরাধজগতের ফিরিস্তি র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।

সেলিম অপরাধজগতে নামার পর সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্যও র‌্যাবকে দিয়েছেন। র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়েছে তার নারী কেলেঙ্কারির চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। জানা গেছে, সারা রাত সেলিম অফিসের গোপন কক্ষে মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতেন

সেলিমের অপকর্মের সাক্ষী গাড়িচালক সুলাইমান বলেন, ‘আমি ৬ মাস সেলিমের সঙ্গে কাজ করেছি। নিজের চোখে বহু অপকর্ম দেখেছি। সেলিমের সঙ্গে প্রতিরাতেই অনেক বড় বড় লোক দেখা করতেন। সেলিম নিজ হাতে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন। তিনি কোটি কোটি টাকার কারবার করলেও আমি এখনো বেতনের ৬০ হাজার টাকা পাব।’

‘গুলশানের বাসার ৪ তলার অফিসে একটি গোপন কক্ষ ছিল। সেলিম ওই কক্ষে গত ৬ মাসে কমপক্ষে ১০০ তরুণীকে গাড়িতে করে এনেছেন। সেলিম মাসের অধিকাংশ সময় বিদেশে থাকতেন। দেশে এলে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই তিনি ব্যস্ত থাকতেন। পুরো রাত সেলিম তার বাসার ৪ তলার গোপন কক্ষে তরুণীদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।

যদিও নিচতলায় তার বড় স্ত্রী থাকতেন। সেলিমের এক স্ত্রী জাপানে থাকেন। রাশিয়াতেও তার স্ত্রী রয়েছে। রাশিয়ান স্ত্রীর ঘরে তার এক ছেলেও আছে।’

সেলিমের গুলশানের বাসায় গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার পর সুলাইমানের এসব কথার সত্যতা মিলেছে।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের এক কর্মকর্তা একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সেলিম প্রধান গুলশানের অফিসের গোপন কক্ষে তরুণীদের নিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতেন। এ বিষয়ে তার অফিসে বেশ কিছু প্রমাণও পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, সেলিম অফিসকে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করতেন।’

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গুলশান থানায় মাদক মামলায় সেলিম প্রধানসহ তার দুই সহযোগীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্য দুই আসামি হলেন- আক্তারুজ্জামান ও রোকন। ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ড আদেশ করেন। রিমান্ড শুনানির আগে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মণ্ডল মাদক আইনে করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে বুধবার (২ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডলের আদালতে তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন ও এক সপ্তাহের রিমান্ড আবেদন করেন গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম। আদালত শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেন।

অপরদিকে তার বিরুদ্ধে গুলশান থানার মানি লন্ডারিং ও মাদক আইনের মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নভেম্বরের ৩ তারিখ সময় নির্ধারণ করেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রকিবুল হাসান।

এদিন (বুধবার) গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং ও মাদক আইনে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে র‌্যাব। এর আগে মঙ্গলবার অফিসে দুটি হরিণের চামড়া রাখায় জুয়া ব্যবসার মূলহোতা সেলিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বিষয়টি নিয়ে র‌্যাব জানায়, হরিণের চামড়া উদ্ধার করার ঘটনায় সেলিম প্রধানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সেলিম ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে পলানোর চেষ্টার সময় সেলিম প্রধানকে আটক করে র‍্যাব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট ফ্লাইটে হাজির হলে সেটি বেলা ৩টায় ঢাকা ছেড়ে যায়। সেখান থেকেই সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়। সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের কারণে ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা তার ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি পালাতে পারেননি।

এরপর সেলিম প্রধানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার গুলশানের কার্যালয় এবং বনানীর বাসায় অভিযান চালান র‌্যাবের সদস্যরা। এ অভিযানে ৪৮টি বিদেশি মদ, নগদ ২৯ লাখ টাকা, ২৩টি দেশের মোট ৭৭ লাখ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ২টি হরিণের চামড়া, ৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক এবং অনলাইন গেমিং পরিচালনার একটি বড় সার্ভার জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) অভিযান শেষে র‌্যাব জানায়, অনলাইনে ক্যাসিনোতে জুয়াড়িদের টাকা তিনটি গেটওয়েতে জমা হতো। সেলিম প্রধানের সহকারী মো. আক্তারুজ্জামান প্রতি সপ্তাহে সেসব গেটওয়ের টাকা তুলে সেলন, যমুনা ও কমার্শিয়াল তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতেন।

এরপর সেসব টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বা ব্যক্তির সঙ্গে করে বিদেশে চলে যেত। এমনকি বিভিন্নভাবে লন্ডনেও টাকা পাঠিয়ে আসছিলেন সেলিম প্রধান। 

সেলিমের কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পি২৪ গেমিং শুরুতে বিনোদনমূলক সফটওয়্যার তৈরি ও প্রকাশ করত। এখন তারা এশিয়ায় দ্রুত বড় হতে থাকা ক্যাসিনো কারবারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এশিয়ার লাইভ ক্যাসিনো মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটি যেন এক নম্বরে যেতে পারে, সেই চেষ্টা আছে তাদের। ২০১৬ সালে তারা শুধু কম্পিউটার গেমস বাজারে আনত।

পরে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়ে। পি২৪-এর সঙ্গে বাংলাদেশে ১৫০টি অপারেটর এবং ক্যাসিনো যুক্ত আছে। অনলাইনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের। জুয়াড়িদের মুঠোফোনে লাইভ ক্যাসিনোতে যুক্ত করে দেওয়ার সুবিধা তারা এনেছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর।

Bootstrap Image Preview