Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কোটি টাকার মালিক, বেতন পান ১০ হাজার টাকা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৮ PM
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসের প্রধান সহকারী কাজল কুমার চন্দের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাত্র ১০ হাজার দুইশ টাকা স্কেলে পেতন পেলেও, চাকরির ১৫ বছর একই কর্মস্থলে থেকে ময়মনসিংহ নগরীতে পাঁচটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকানের মালিক হয়েছেন তিনি। তবে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে দুটি ফ্ল্যাট ও দোকান তার ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

অভিযোগ রয়েছে, একজন নকলনবিশকে অস্থায়ীভাবে যোগদানের ১০-১৫ বছর পর চাকরি স্থায়ী করতে ৫-১০ লাখ টাকা কাজলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের অফিসকে দিতে হয়।

সেখান থেকেও কাজল মোটা অঙ্কের কমিশন পান। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে মাসোহারা, বদলির তদবির ও বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে তিনি বনে গেছেন কোটিপতি, করছেন বিলাসী জীবনযাপনও। বছরে দুবার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশেও ভ্রমণ করতে যান কাজল।

নগরীর দুর্গাবাড়ি সড়কের রাইট পয়েন্টের মালিক হোসেন ফকির জানান, জেলা রেজিস্ট্রারের প্রধান সহকারী কাজল কুমার চন্দ তার কাছ থেকে ৯৩০ স্কয়ার ফিটের চারটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান কিনেছেন। যা প্রায় দেড় কোটি টাকায় তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সোহেল আকন্দ জানান, রেজিস্ট্রারের প্রধান সহকারী ক্ষমতার দাপটে একই কর্মস্থলে ১৫ বছর ধরে রয়েছেন। নামে-বেনামে শহরে রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট।

নগরীর রাইট পয়েন্ট টাওয়ারে পঞ্চম তলায় দুটি, ১১ তলায় দুটি এবং নিচতলায় রয়েছে একটি দোকান। আঠারবাড়ীতে রয়েছে আরও একটি নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাট। নিজের নামে দুটি ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রি করলেও বাকি তিনটি রেজিস্ট্রি করিয়েছেন তার ভাই বিপ্লবের নামে।

ময়মনসিংহ নকলনবিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, দৈনিক তাদের অফিসে ৬০-৭০ জন নকল তোলার আবেদন করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে নকল দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে নেওয়া হয় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।

অতিরিক্ত টাকা প্রতিদিন রেকর্ড কিপারের মাধ্যমে কাজল বাবুর পকেটে যায়। এছাড়া কাজল বাবুকে ম্যানেজ করে জেলার ফুলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ষাটোর্ধ্ব ১০-১৫ নকলনবিশ নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার জল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হক জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে হিন্দুধর্মের শিক্ষক বিপ্লব কুমার চন্দ। তাদের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তবে তাদের বাড়িতে যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা বিক্রি করেও ময়মনসিংহ শহরে পাঁচটি ফ্ল্যাট ও দোকানের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। তবে শুনেছেন, তার ভাই কাজল কুমার চন্দ অনেক টাকা রোজগার করেন।

কাজলের ভাই স্কুলশিক্ষক বিপ্লব কুমার চন্দ জানান, তিনি হাইস্কুলে এবং তার স্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করেন। শহরে আমাদের পরিবারের পাঁচটি ফ্ল্যাট ও দোকান রয়েছে। মূলত সবকটি ফ্ল্যাটের মালিক তার ভাই কাজল হলেও দুটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান আমার নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন।

একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে চাকরি করে কীভাবে পাঁচটি ফ্ল্যাট ও দোকানের মালিক হন, সেটি বোধগম্য নয় বলে জানিয়েছেন জেলা জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক ও ময়মনসিংহ জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম চুন্নু।

দ্রুত তদন্ত করে অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তার অনৈতিক কাজে সহযোগীদেরও বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

অভিযোগের বিষয়ে কাজল কুমার চন্দ জানান, মানুষ ১৫ বছর সরকারি চাকরি করলে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়। তিনি মাত্র দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন, বেশি কিছু করেননি। বাকি ফ্ল্যাটগুলো তার পরিবারের সদস্যদের কেনা।

জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর জানান, তিনি আসার আগে রেজিস্ট্রি অফিসে কী হয়েছে জানেন না। তবে এখন রেজিস্ট্রি অফিসের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তবে কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, জেলার প্রত্যেকটি সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Bootstrap Image Preview