প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
প্রস্তাবগুলো হচ্ছে-
১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে সুস্পষ্ট করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।
৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে ।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সেই প্রস্তাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ সমূহের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নসহ রাখাইন রাজ্যে একটি বেসামরিক নিরাপদ পর্যবেক্ষণ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও ছিল।
শেখ হাসিনা তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীর প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পেতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এর স্থায়ী সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে হবে, যেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা সমস্যার কোনোরকম সমাধান ছাড়াই আমরা আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, টেকসই, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
শেখ হাসিনা বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে। ওআইসি তার জবাবদিহিতা সম্পর্কিত অ্যাড-হক মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
বাসস জানায়, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সেক্রেটারিয়েটের যৌথভাবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমেন এবং সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল-আসাফ বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইন এবং গাম্বিয়ার মন্ত্রী এবং প্রতিনিধিরা যোগদান করেন।