থানার ওসি ও পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অবৈধ ব্যবসার সংবাদ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।
আর এই সুযোগে ভুক্তভোগীরাও তাদের নানা অভিযোগের কথা নির্ভয়ে তুলে ধরছেন সাংবাদিকদের কাছে।
সম্প্রতি যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাইফ আমিন নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক। গত ২০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন তিনি।
তিনি একসময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত। ফেসবুকে তিনি যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো:
ক্লাব-জুয়া-সাংসদ এবং ওসি ক্যাসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।
মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহব্যবসা, মাসাজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের দ্বিতীয় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে।
ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌঁছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/নাইট/গল্ফ ডে/নাইট।
এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউসগুলোতে পাঠানো হয়।
বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না।
মফস্বলের ওসিরা চান সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লক্ষ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস।
ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলংকৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন।
চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ পাঁচ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক ও গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত (তথাকথিত যুবলীগ নেতা)।
টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসাপ্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রাত করেন না।
এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ শতাংশ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিত।
এবং র্যাবের এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ এক যুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা সত্ত্বেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহাঃ সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌঃ। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন।
জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব।