Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ রবিবার, মে ২০২৪ | ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৪ মন্ত্রীকে শামীমের ফোন, র‌্যাবের কথা শুনে সাথে সাথেই ফোন রেখে দেন মন্ত্রীও

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:২৭ PM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৬:২৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


টেন্ডার, চাঁদা ও অস্ত্রবাজি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা জি কে শামীম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে নানান ফন্দিফিকির খোঁজেন।

তিনি প্রভাবশালীসহ নানা মহলে জোর লবিং চালান। মোটা অংকের টাকা অফার দেন বিভিন্নজনকে। এমনকি হাতে হাতকড়া পড়ানোর পরও র‌্যাবকে ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করেন তাকে ছেড়ে দিতে।

শুধু তাই নয়, এ সময় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ৪জন মন্ত্রীকে ফোন করেন শামীম। এ সময় একজন মন্ত্রী ফোন ধরে র‌্যাবের কথা শুনে সাথে সাথেই মোবাইল ফোন রেখে দেন। অপর তিনজন ফোন রিসিভ করেননি।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, জি কে শামীম তার অফিস ও বাসায় অভিযান না চালাতে এবং গ্রেফতার এড়াতে র‌্যাবকে ১০ কোটি টাকার ঘুষ প্রস্তাব করেছিলেন। র‌্যাব আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।

জি কে শামীম তখন র‌্যাবকে বলেন, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। এখনই ১০ কোটি টাকা দিচ্ছি। চাইলে আরও দেব। যেখানে যেভাবে বলবেন সেখানে টাকা পৌঁছে দেব। শুধু আমাকে এবারের মতো ছেড়ে দিন।’

কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভনেও কাজ হচ্ছে না দেখে জি কে শামীম অসুস্থতার ভান করেন। বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তখন তাকে অফিস কক্ষেরই একটি চেয়ারে বসার অনুমতি দেয়া হয়।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর শামীমকে নিচে নামিয়ে আনা হলেও র‌্যাবের গাড়িতে উঠতে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। শামীম তার কোটি টাকা মূল্যের আলফার্ড গাড়িতে করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। বাইরে দাঁড়ানো পিকআপে তুলে তাকে র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে শামীম বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম গণপূর্ত অধিদফতরের ২০ জন সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নাম বলেছেন, যাদের মাসে ২-৫ লাখ টাকা দিতেন তিনি।

এর বদলে তারা শামীমকে ঠিকাদারির কাজের টেন্ডার পেতে সাহায্য করতেন। প্রাাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ যুবলীগ নেতা সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানান, ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দিতে তিনি দুই কর্মকর্তাকে এখন পর্যন্ত শত কোটি টাকা দিয়েছেন। সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিতে শামীম ও সাঙ্গপাঙ্গোরা সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিতেন। সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে শামীম দাবি করেছেন যে দুই প্রকৌশলী ছাড়াও যুবলীগের অন্তত দু’জন শীর্ষ নেতাকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতেন তিনি।

বাইরে যেত ক্যাসিনোর টাকা দেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির টাকা ছাড়াও ক্যাসিনোর টাকার ভাগ যেত বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের কাছে। সে টাকা পাঠানো হতো ওমানের মাসকট ব্যাংকের মাধ্যমে।

ওমানে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম সেখান থেকে টাকা তুলে জার্মানিতে থাকা জিসানের কাছে পৌঁছিয়ে দিত। ঢাকা থেকে এই আয়োজন করে দিতেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম গং। সবসময় একই রুট অনুসরণ করা হতো না।

কখনো কখনো সিঙ্গাপুর হয়েও টাকা যেতো জিসানের কাছে। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।

গোয়েন্দারা জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ নানা ধরনের তথ্য দিতে শুরু করেছেন। যা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। খালেদের কাছ থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব তথ্য যেন পাওয়া যায় সে ব্যাপারে সতর্ক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানায় সূত্রটি। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা ধরনের তথ্য এসেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) শারমিন জাহান বলেন, খালেদের বিরুদ্ধে গুলশান ও মতিঝিল থানায় দুটি মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

সেগুলোর কাগজপত্র আমরা এখনও হাতে পাইনি। কাগজপত্র হাতে এলে তা পর্যালোচনা শেষে আমরা তদন্ত শুরু করব। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোন দেশের কোন ব্যাংকে টাকা গেছে সেটিও তদন্ত করে বের করা হবে।

Bootstrap Image Preview