Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ রবিবার, মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাসর ঘরে গিয়ে স্বামী জানলেন, নববধূ ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ PM
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বিয়ের রাতে বাসর ঘরে নববধূকে নিয়ে বরের সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয়  হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করে জানা যায়, সেই নববধূ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই খবর প্রকাশ পেলে ওই নববধূর মা বাদী হয়ে তারই ভাই-ভাবি ও ভাগনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় এখন কারাগারে ওই নববধূর মামা আবুল কালাম।    

এই ঘটনাটি ঘটেছে রগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নে। 

জানা যায়, গত ১৫ জুলাই পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা লাল মিয়ার ছেলে পাথরঘাটা মাজহার উদ্দিন টেকনিক্যাল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জহির উদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ওই কিশোরীর বিয়ে হয়। তবে স্বামী জহির উদ্দিন গত ১১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীকে তার বাড়িতে তুলে নেন। জহির তখনও জানতেন না, নববধূ অন্তঃসত্ত্বা। বাসর রাতে বিষয়টি নিয়ে জহিরের মনে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়। তবে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে স্ত্রীকে সন্দেহের চোখে রাখে।

পরে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জহির তার ভাবিকে জানালে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে ওই নববধূকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। শেষে তারা জানতে পারেন, নববধূ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা!

পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে কোনো সমাধান না পেয়ে থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ালে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে গত শুক্রবার ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা যায়, ওই কিশোরী ৩২ সপ্তাহ অন্তঃসত্ত্বা। চলতি বছরের ৬ নভেম্বর ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়। একই দিন বিকেলে কিশোরীর মা পাথরঘাটা থানায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনে তার আপন ভাই আবুল কালাম, ভাইয়ের বউ ও তাদের ছেলেকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আবুল কালামকে আটক করে পাথরঘাটা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অভিযুক্ত মামাতো ভাই সোলায়মানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে অন্তঃসত্ত্বা ওই নববধূ পুরো ঘটনার খুলে বলেন। তার ভাষ্যমতে, ওই কিশোরীর মা-বাবা ঢাকায় কাজ করতেন। ১৬ বছরের মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রায় ১০ মাস আগে আপন ভাই আবুল কালামের বাড়িতে রেখে যান। কিন্তু আবুল কালামের বাড়িতে থাকা অবস্থায় তার ছেলে সোলায়মানের সঙ্গে ওই কিশোরীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে মামাতো ভাই সোলায়মানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। এ কথা গোপন রেখেই ওই কিশোরীর বাবা-মা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টুর উপস্থিতিতেই ইউপি কার্যালয়ে জহিরের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জহির উদ্দিনের ভাই আল-আমিন জানান, পাথরঘাটার কাকচিড়া ইউপি চেয়ারম্যান পল্টু স্থানীয় কাজীকে ডেকে এনে দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে পড়ান এবং কাবিন রেজিস্ট্রি করিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী জহির উদ্দিন বলেন, ‘পারিবারিক সম্মতিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বার খবর গোপন রেখে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেয়ের অভিভাবকরা। আমি এর বিচার চাই।’

তবে কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন পল্টু বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। আমার কার্যালয়ে এমন কোনো বিয়ে হয়নি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলতাফ হায়দার ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও পৌর কাউন্সিলর মুনিরা ইয়াসমিন খুশি বলেন, ‘এটি একটি ধর্ষণের ঘটনা, অপরদিকে অন্তঃসত্ত্বার কথা গোপন করে একজন ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাল্যবিয়ে দেওয়া। সব মিলিয়ে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা দরকার।’

পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ওই কিশোরীর মামাতো ভাই সোলায়মান ও তার বাবা-মাকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। এরপর পরই আবুল কালামকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

Bootstrap Image Preview