Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘শয়তানের বাচ্চা’ বলে আহত বৃদ্ধর বিছানার চাদর ছিড়ে ফেললেন চিকিৎসক, ভিডিও ভাইরাল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৩ PM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ভোলার লালমোহনে অসুস্থ এক বৃদ্ধকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই বৃদ্ধকে কোনো ধরনের চিকিৎসা না দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহসিন খানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আহত এক বৃদ্ধ লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির পর তাকে কোনো বিছানা দেয়া হয়নি। তাই তিনি ফ্লোরে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন ডা. মহসিন খান। এরপরও আহত বৃদ্ধ চিকিৎসার জন্য সেখানে থাকায় হাসপাতাল থেকে দেয়া একটি চাদর ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।

ওই ঘটনার একটি দুই মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। চিকিৎসকের এমন আচরণে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে বৃদ্ধ রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ভিডিও প্রকাশের পর ওই চিকিৎসককে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন আচরণ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপতালের একটি শয্যায় ঘুমানোর জন্য প্রবীণ একজন মানুষকে ধমকাচ্ছেন চিকিৎসক মহসিন খান। তিনি তাকে ‘শয়তানের বাচ্চা’ বলেও গালি দিয়েছেন। শয্যায় বিছানো চাদরটিও নিজ হাতে টেনে ছিড়ে ফেলছেন।

চিকিৎসক ধমকে বলছিলেন, তোরে এই চাদর কে দিছে? এই চাদর ছিঁড়ে টাঙায় রাখব। তুই কিসের অসুস্থ, তোকে দুই-তিনটা কিল-ঘুষি দিছে। আমি তো দুই বছর ধরে দেখতে আছি, শয়তানের বাচ্চা।

এই রোগীগুলো আমার কষ্ট পায় তোদের জ্বালা-যন্ত্রণার জন্য। তুই সুস্থ রোগী, তুই ব্যথা পাইছস, ওষুধ নিবি। তোর চেয়ে বেশি অসুস্থ রোগী বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। তুই ভর্তি হইছস বাব-দাদার বংশানুক্রমে মামলা করার জন্য, সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য।

তোরে আমি আর চিকিৎসা দিমু না, তোরে সার্টিফিকেট দিমু না। তুই রোগী, তোরে কোনো কাগজ দিমু না। তোরে দিমু সাদা কাগজ। সাদা কাগজে তোরে চিকিৎসা দিমু। হাসপাতালের কোনো কাগজ তোরে দিমু না।

এছাড়া অন্য রোগীদের দিকে মুখ করে ডা. মহসিন খান বলেন, ওরে কালকে রাতের বেলা বের করে দিছিলাম না, মনে আছে? আমার নির্দেশ মানে না কেন, আমি কি এখন চইলা যামু?

ফেসবুকে ভিডিওটির নিচে শত শত মানুষ কমেন্ট করছেন। তারা প্রশ্ন তুলছে, যদি রোগী সুস্থই হন, তাহলে তাকে ডাক্তার তাকে ভর্তি করিয়েছেন। আর কেনই বা এরকম একটি বয়ষ্ক লোককে গালমন্দ করা হচ্ছে। সরকারি টাকায় কেনা একটি চাদর একজন সরকারি চাকুরে ছিড়ে ফেলতে পারেন কি না, এ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

চিকিৎসক মহসিন খান বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর ধারণক্ষমতা ৫০ জন। কিন্তু প্রতিদিন এখানে ৮০ জনের বেশি ভর্তি থাকে। এরপরও প্রতিদিন ১০-১৫ জন রোগী মারামারি করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই রোগীদের জন্য গুরুতর অসুস্থ রোগীরা সিট না পেয়ে হাসপতালের ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’

‘আমি মারামারি করে আহত রোগীদের জন্য হাসপাতালের বারান্দার ফ্লোরে আলাদা সিটের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটি বাইরে না থেকে বেডে এসে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

এর কারণে অনেক গুরুতর রোগীকে বারান্দার ফ্লোরে থাকতে হয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় বৃদ্ধ লোকটিকে বললে তিনি তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এজন্যই ওই লোকটির উপর আমার মেজাজ খারাপ হয়। আর আমি তাকে কথাগুলো বলেছি। এছাড়া যে বেডসিটটি ছেড়া হয়েছে সেটি পুরনো ছিল।’

ভোলার সিভিল সার্জন রথিন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। লালমোহন হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কথা বিবেচনা করে তাকে প্রথম বারের মতো সতর্ক করা হয়েছে।

পরবর্তীতে এরকম কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কিছু লোক একটি চক্রের প্ররোচনায় হাসপাতালে এসে বিশৃঙ্খলা করে। যার কারণে এসকল ঘটনার সৃষ্টি হয়।’

Bootstrap Image Preview