Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এখনো বন্ধ হয়নি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫১ PM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৮:৫১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হচ্ছে না। সেখানে মোবাইল অপারেটরগুলোর টু-জি সেবা সার্ভিস সবসময় চালু থাকবে। থ্রি-জি ও ফোর-জি সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সচল থাকা ৮/৯ লাখ সিম নিষ্ক্রিয় করা ও নতুন করে সিম বিক্রি ঠেকাতে তৎপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোনের সুবিধা না পায়, তা সাতদিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সব মোবাইল অপারেটর কোম্পানিকে গত ১ সেপ্টেম্বর জরুরি নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসির পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়, “রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্ব বিবেচনা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনসুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে মোবাইল সুবিধা না পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী কমিটি এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কমিশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাপক হারে সিম/রিম ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে। এমতাবস্থায়, আগামী ০৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রকার সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সিম ব্যবহার বন্ধ তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মোবাইল সুবিধাদি প্রদান না করা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বিটিআরসিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হল।”

বিটিআরসি নির্ধারিত সেই সাতদিনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিপূর্ণভাবে চালু ছিল মোবাইল নেটওয়ার্ক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হবে সেটি ভুল। এমন কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা সেখানে সবসময় টু-জি সেবা চালু রাখব। তবে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত থ্রি-জি ও ফোর-জি সেখানে চালু থাকবে। তবে রোহিঙ্গাদের কাছে নতুন করে সিম বিক্রি কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে।

মন্ত্রীর কথার সত্যতা পাওয়া যায় ক্যাম্পগুলোতে। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ক্যাম্পে অবস্থানরত একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে ফোনে কথা বলা সম্ভব হয়েছে।

কুতুপালং ক্যাম্প-৩ এর বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সকাল থেকে নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ইন্টারনেটে একটু সমস্য ছিল। কিছুক্ষণ আসে আবার চলে যায়।

বালুখালী ক্যাম্প-১৭ এর বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক ও এয়ারটেল আছে। তবে গ্রামীণফোন একেবারে নেই। ফোনে কথা বলা যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ভিডিও কলেও কথা বলা যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক চালু রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত ক্যাম্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধক হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

তারা বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চত করতে হলে নেটওয়ার্কের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশি অপারেটদের নেটওয়ার্ক নাকি মিয়ানমারেও পাওয়া যায়। এসব অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে।

এ দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় ব্যবহার করা সিমের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ লাখ। নতুন সিম বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হলেও এ ৮-৯ লাখ সিম নিষ্ক্রিয় করার উপায় খুঁজতে শুরু করেছে বিটিআরসি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে কক্সবাজার প্রশাসন এবং পুলিশের প্রত্যক্ষ সহায়তা চাওয়া হয়েছে বিটিআরসির পক্ষ থেকে।

রোহিঙ্গাদের সিমকার্ড ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে কোন অবস্থাতেই সিম বিক্রি করা যাবে না। যদি কোন এলাকা থেকে সিম এনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক কিছুটা সচল রয়েছে বলে তার কাছে খবর আছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোবাইল নেটওয়ার্কের বিষয় নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে। কিছুটা দুর্বল হলেও কয়েকটি ক্যাম্পে আগের মতোই নেটওয়ার্ক পাওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং পরবর্তী নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখন নেটওয়ার্ক সচল রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হবে। যাতে দ্রুত সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত নিধন‘ অভিযান পরিচালনা করে। তখন প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

আগে থেকেই আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরাসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

Bootstrap Image Preview