Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ শনিবার, মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বঙ্গবন্ধু আর আমার জন্য পুরো নয় মাস রোজা রেখেছেন মা: মোস্তফা জব্বার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০১৯, ১০:০৭ PM
আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯, ১০:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


একাত্তরের রণাঙ্গনের হাজারো গল্প। রণাঙ্গনের সেই বীরসেনানীরা নয় মাসের প্রতিটি দিন তৈরি করেছিল ইতিহাসের একেকটি অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন মোস্তাফা জব্বার, যিনি এখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

সোমবার (২৯ জুলাই) জাতীয় ডাক দিবসের এক অনুষ্ঠানে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশের ঘটনা উপস্থাপন করছিলেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্র।

সচিবালয়ে সেই অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা চট করে কাগজে-কলমে স্বাধীনতা অর্জন করিনি। আমাদের একেবারে খুব কম মানুষ আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল না। আমরা যারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি, তাদের ডিটারমিনেশন একটা ছিল, হয়তো বয়সও ছিল এবং মানসিকভাবে সেই প্রস্তুতিটা ছিল যে আমি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করবো। কিন্তু বাংলাদেশ কেবল অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়নি।’

‘আমি ঠিক একইভাবে মনে করি, যে মহিলা আমাকে তার সবচেয়ে প্রিয় হাঁসটা জবাই করে খাইয়েছে, তার প্রতি বাংলাদেশ কোনোভাবেই মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারে না, তার অবদান কোনোমতেই কম না।’

‘একাত্তরে একজন খ্রিস্টান ধর্মীয় রানার চিঠির বস্তায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতেন, পাক বাহিনী একদিন চ্যালেঞ্জ করে বসলে তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বস্তা নিয়ে’- ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সেই গল্প বলছিলেন অনুষ্ঠানে।

মোস্তাফা জব্বার সেই গল্পের রেশ টেনে বলেন, ‘রানার ডাকবাক্সে গুলি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে দিয়েছে, তাকে মুক্তিযোদ্ধা না বলার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই একেবারে চাক্ষুষভাবে অংশ নিয়েছেন।’

এরপর নিজের গল্পটা বলেন মোস্তফা জব্বার, ‘আমার স্পস্ট মনে আছে যে, আমি ৭ই মার্চ জাতির পিতার ভাষণ শোনার পরে আমাদের ছাত্রলীগের নির্দেশ পেলাম- বাড়ি যাও, সংগ্রাম কমিটি কর এবং সশস্ত্র বাহিনী গঠন করার জন্য লোক জোগাড় কর।’

‘চলে গেলাম, চলে যাওয়ার পরে…,’

‘আমার এলাকাটা একটু প্রত্যন্ত বলে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করেছি; ওখানে বস্তুত প্রায় প্রশাসন চালিয়েছি আমরা। কেরোসিন তেল আর লবণের রেশনিং করতে হতো। কারণ, এই দুইটারই অভাব ছিল ওই এলাকার মানুষের, বাকি সব জিনিস তারা নিজেদের মতো চলাতে পারতো। চলাচলের বিঘ্ন ছিল সেটারও ব্যবস্থা ছিল।’

মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বারবার চেষ্টা করছিলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো, কিন্তু বাপ কোনোমতেই ছেড়ে দিচ্ছিলেন না। মায়ের কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিলাম। এটা অনেকের জন্যই হয়তো বিস্ময়কর- মায়েরা সচরাচর সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে- চিন্তাও করতে পারে না।’

‘আমার মা মিথ্যা কথা বলেছিলেন বাবার সঙ্গে, বলেছেন যে- ও ফুপুর বাড়ি বেড়াতে গেছে। ফুপুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার নাম করে মুক্তিযুদ্ধে চলে যাই। কিন্তু বাবাও খুব তীক্ষ্ণ মেধার লোক ছিলেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তিনি টের পেয়ে যান যে ঘটনাটা ভিন্ন রকম। আমাদের বাড়ির যিনি গোমস্তা ছিলেন তার হাত দিয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যাচ্ছে যখন, যেতে দাও…। সুতরাং ওভাবে কাটিয়েছি এবং আমার মা পুরো নয় মাস… রোজা রেখেছেন, আমার জন্য আর জাতির পিতার জন্য।’

গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল মন্ত্রীর, উপস্থিত সবার গলাও যেন ধরে আসছিল তখন। বিভাগের সচিব আশোক কুমার বিশ্বাসসহ কর্মকর্তারাও তখন আবেগের সাগরে ছিলেন।

‘এই রকম মহিলারাও তো মুক্তিযোদ্ধা। সুতরাং আমরা পুরো দেশটাই প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি।’

‘…মুক্তিযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বড় ছিল, বাংলাদেশ শব্দটা কোথাও উচ্চারিত হয়েছে, ওটাই আমাদের জন্য বড় পাওনা ছিল। কারণ, আমরা পাকিস্তান নামক এক দানবের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র গঠন করছি, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রধান টার্গেট ছিল বাংলাদেশ উচ্চারণ করি,’ বলেন মোস্তাফা জব্বার।

স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অবদান রাখা মানুষগুলোকে নিয়ে মন্ত্রী জব্বার বলেন, ‘ডাক বিভাগের অনেক লোক নানাভাবে শহীদ হয়েছেন, সবার হিসাবটা আশা করি তাদের কাছে আছে। আমার কাছে মনে হয়, আমরা শহীদদের কিছু দিতে পারবো না, কিন্তু সম্মানটুকু যদি দিতে পারি, তাদের পরিবার কী অবস্থায় আছে, তাদের প্রতি একটু যত্নবান হওয়া- এটাই বড় কাজ হবে।’

Bootstrap Image Preview