Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মূল আসামিদের বাদ দিয়ে মিন্নিকে নিয়ে বেশি উৎসাহিত পুলিশ: হাইকোর্ট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৬:৫২ PM
আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৬:৫২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মূল আসামিদের বাদ দিয়ে নিহতের স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে পুলিশের বেশি উৎসাহিত হওয়া কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার (২৮ জুলাই) এ মন্তব্য করেন।

একই সঙ্গে পিবিআই বা সিআইডির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন আদালত।

রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দকে আদালত বলেন, পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্ট হলে মিন্নির পরিবারের কেউ আদালতে আসতে পারেন। স্বাধীন দেশে এটি সবার অধিকার। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর পরও তারা পুলিশের নজরদারির মধ্যে কীভাবে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। পুলিশ সতর্ক থাকলে হয়তো রিফাতকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না। তাই মিন্নির প্রতি উৎসাহী না হয়ে মামলার মূল আসামিদের দিকে পুলিশের নজর দেয়া উচিত।

তবে আদালত বলেন, পুলিশি তদন্তে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রধান সাক্ষী মিন্নি আসামি হতে পারেন।

গত ২৫ জুলাই রিফাত হত্যা মামলায় পিবিআই বা সিআইডির তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। মিন্নির পরিবারও পুলিশি তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে মামলাটি পিবিআই বা সিআইডিতে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। তবে তারা এখনও এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়নি।

প্রসঙ্গত, বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে গিয়ে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর থেকে মামলা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশলাইনসে নিয়ে যায় পুলিশ। এর পর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পর দিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।

পর দিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

গত শুক্রবার বিকালে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের দাবি, মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তিনি এ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে দায়ী করে আসছেন। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘সবকিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে রক্ষা করার জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’ শম্ভুর ছেলে সুনামের বিরুদ্ধে কিশোরের অভিযোগ, তার জন্যই এতদিন মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি আইনজীবীরা। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার আইনজীবীদের একটি অংশ মিন্নির পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

Bootstrap Image Preview