Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রামে হেফাজতের এলাকায় এক দেয়ালের ব্যবধানে মসজিদ-মন্দির!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৮ PM
আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


চট্টগ্রামে উপশহর নামে খ্যাত হাটহাজারী। মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বৌদ্ধ, খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীও বসবাস করেন।

বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইতুল করিম নামে প্রধান জামে মসজিদ প্রকাশ ‘বড় মসজিদ’ এবং ‘শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির’।

মসজিদ ও মন্দিরে শুধু এক দেয়ালের ফারাক। যা শুধু এ দেশে নয়, বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।

শনিবার হাটহাজারী বাজারস্থ সীতাকালী মন্দিরে প্রবেশ করলে দেখা মিলল মন্দিরের পুরোহিত ষাটোর্ধ্ব ভানু ভট্টাচার্যের। তখন বেলা ১২টা বেজে ২৫ মিনিট। ব্যস্ত কিনা জানতে চাইলে পুরোহিত জানালেন, মন্দিরে পূজা দিতে হবে। প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।

এর মধ্যে মিনিট পাঁচেক পরে পুরোহিত পূজা দিতে শুরু করলেন। ঠিক একই সময়ে ওই মন্দিরের সঙ্গে লাগোয়া বড় মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা ক্বারী বরিউল যোহরের আজানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

দেয়ালের একদিকে পুরোহিত, আর অন্যদিকে মুয়াজ্জিন একই সময় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের আরাধনার কাজ সম্পন্ন করলেও কেউ কারও কর্মের অন্তরায় হননি।

কথিত আছে, প্রায় শত বছরের পুরানো এ মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘ সময় ধরে পূজা-অর্চনা করে আসলেও এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো বৈরি অবস্থা তৈরি হয়নি।

সীতাকালী মন্দির পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি উদয় সেন বলেন, বহির্বিশ্বে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটলেও এ উপজেলার চিত্র ছিল ব্যতিক্রম। শুনেছি, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও এখানে একে-অপরের ওপর হামলা তো দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসার ছাত্ররাই পাহারা দিয়ে মন্দিরকে রক্ষা করেছেন। শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম যার যার অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।

১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী মাদ্রাসা। ১১৯ বছরের ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ইতিহাস নেই।

এমনটা দাবি করে হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জসিম উদ্দিন জানান, শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার সীমানা দেয়ালের সঙ্গে গড়ে উঠেছে কালী মন্দির। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুই ধর্মের অনুসারীরা সহাবস্থানে থেকে যার যার মতো করে ধর্মীর আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন। ভিন্ন ধর্মের দুটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি থেকে যার যার মতো করে ধর্মীয় রীতি পালন করছেন তারা। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ একটি উদারহরণ।

দুপুর ২টায় পূজা শেষ করে সীতাকালী মন্দিরের পুরোহিত ভানু ভট্টাচার্য প্রতিবেশী অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

তিনি বলেন, প্রায় একযুগ ধরে এ মন্দিরের সেবা করছি। কখনো মাদ্রাসার কেউ, কিংবা আশপাশের কোনো মুসলমান আমাদের জ্বালাতন করেননি। বরং তারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেছেন।

মাদ্রাসার প্রধান জামে মসজিদের মাত্র পাঁচ গজের মধ্যেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সীতাকালী মায়ের মন্দির। মসজিদ ও মন্দিরের পাশাপাশি এই প্রতিচ্ছবিই বলে দেয় বাংলাদেশের মুসলমানরা কতটা সুন্দর সহনশীল জাতি এবং কত বেশি উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেন। সূত্র-যুগান্তর

Bootstrap Image Preview