Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ সোমবার, মে ২০২৪ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মেয়ের সৎ বাবার চক্রান্তের স্বীকার গণপিটুনিতে নিহত সিরাজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯, ০৩:২৩ PM
আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯, ০৩:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছিলেন না মেয়েকে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজও করেছিলেন। কিন্তু পাননি। অবশেষে মেয়ের খোঁজ পেয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না বাক প্রতিবন্ধী সিরাজ। বাড়ির পাশের একটি মোবাইল ফোনের দোকান মালিকের কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার নিয়ে মেয়ের জন্য চুড়ি ও লিপিস্টিক কিনে মেয়ের কাছে যান। কিন্তু সেই যাওয়ায় তার শেষ যাওয়া। স্ত্রীর বর্তমান স্বামীর মিথ্যা তথ্যে গণপিটুনিতে মরতে হলো তাকে।

সিরাজ পেশায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো এলাকার ঠিকাদার মোহর চানের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তারা। গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার মুগিয়া বাজার এলাকায়। শনিবার (২০ জুলাই) সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া আল-আমিন নগর এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন সিরাজ।

পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি সিরাজের ভাই ও এলাকাবাসীর। সহজ-সরল এ প্রতিবন্ধীর হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে রবিবার (২১ জুলাই) বেলা ১১টায় এলাকায় মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।

প্রায় ১০ বছর আগে শামসুন্নাহারের সঙ্গে বিয়ে হয় বাক প্রতিবন্ধী সিরাজের। ৬ বছরের এক মেয়ে রয়েছে তাদের। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন।

বছর খানেক আগে এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রী আ. মান্নান ওরফে সোহেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান সিরাজের স্ত্রী শামসুন্নাহার। এক পর্যায়ে পালিয়ে যান তারা। সঙ্গে নিয়ে যান মেয়ে মিনজুকেও। অনেক খুঁজেও কোনো হদিস পাননি। ৫-৬ মাস আগে স্ত্রী শামসুন্নাহার তালাকনামা পাঠান সিরাজের কাছে।

সেই থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সিরাজ। স্ত্রীকে না পেলেও নিজের মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেয়ের সন্ধান পান সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায়। একাধিকবার দেখেও আসেন মেয়েকে।

শনিবারও একইভাবে মেয়েকে দেখতে যান সিরাজ। মেয়ের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তার স্ত্রীর বর্তমান স্বামী আব্দুল মান্নান ওরফে সোহেল তাকে দেখে ফেলে ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার দিলে এলকাবাসী গণধোলাই দেয় সিরাজকে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রবিবার তার মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোগেইট এলাকায় নিয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকাবাসী। তাদের অনেককেই আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, ‘এমন করে মানুষকে পিটিয়ে মারতে পারলো লোকজন!’

অনেকে এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেও উল্লেখ করেন ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে মিছিল করেন।

তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় কোনো মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সেলিম মিয়া।

Bootstrap Image Preview