Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পুলিশে নিয়োগ: জুতার অভাবে সেন্ডেল পড়েই ভাইভা বোর্ডে এসেছিল তারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৯, ০৫:৪২ PM
আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯, ০৫:৪২ PM

bdmorning Image Preview


গতকাল মঙ্গলবার উত্তীর্ণদের পরিবারের সদস্যরা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কুমিল্লায় এবার বিনা পয়সায় চাকরি পেলেন কৃষক, রিকশাচালক, মাছ বিক্রেতা, নাইটগার্ড ও গৃহপরিচারিকার সন্তানেরাও।

মেধার ভিত্তিতে বিনা পয়সায় সোনার হরিণ খ্যাত এ চাকরি পেয়ে পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের উত্তীর্ণরা।

এবার জেলাটিতে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় এবং মেধাবীরা পুলিশে নিয়োগ পাওয়ায় জেলার সর্বত্রই চলছে প্রশংসা।

এদিকে কথা রাখলেন পুলিশ সুপার, বিনা পয়সায় চাকরি দিয়ে পরিচয় দিলেন সততার- এমন হাজার হাজার স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, কুমিল্লায় জেলায় এবার পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম। সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ৩০৭ জনকে চাকরি দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তার ঘোষিত ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পাওয়া ৩০৭ জনের মধ্যে ১৩৪ নারী ও ১৭৩ জন পুরুষ। সোমবার রাতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় ১০৩ টাকায় চাকরি পেয়ে অনেককেই খুশিতে কান্না করতে দেখা যায়।

গত ১ জুলাই কনস্টেবল পদে অন্তত ৬ হাজার নিয়োগপ্রত্যাশী শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখান থেকে ২ হাজার ৬৫৪ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়।
লিখিত পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৫৪ জনের মধ্যে ৬১০ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এদের মধ্যে ৪৭৯ জন পুরুষ এবং ১৪১ জন নারী।

গত শনিবার দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সব অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শনিবারই মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। আর সোমবার রাতে ঘোষণা করা হয় চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩০৭ জনের নাম।

আদর্শ সদর উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাছা গ্রামের অভাবী সংসারের বড় সন্তান মেহেদী হাসান কুমিল্লা নগরীতে সেনিটারি মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। মাত্র একশ তিন টাকায় চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফলাফল ঘোষণার পর কান্না করতে দেখে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

জেলার মুরাদনগর উপজেলার হিরারকান্দা গ্রামের সিএনজিচালক ইউনুস মিয়ার মেয়ে লিজা আক্তার, একই উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামের কৃষক সোনালী মিয়ার ছেলে আশরাফুল ইসলাম সোনার হরিণ খ্যাত এ চাকরি পেয়ে মহাখুশি।

লিজা আক্তার ও আশরাফুল ইসলাম টাকার অভাবে জুতা কিনতে না পেরে সেন্ডেল পড়েই ভাইভা বোর্ডে এসেছিল।

জেলার বাঙ্গরা থানার শ্রীরামপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে পপি আক্তার। তার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন আর মা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তিনি জানান, বিনাপয়সায় পুলিশের চাকরি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নিয়োগে এ জেলায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাই বেশিরভাগ পুলিশের চাকরি পেয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রদানের উদ্দেশ্যে বেশ কিছুদিন থেকেই ব্যাপক প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

আর্থিক লেনদেনসহ সব অনিয়ম ও সুপারিশ পরিহার করে সুষ্ঠুভাবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করতে সব রকমের সতর্কাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে বলে জানান এসপি।

Bootstrap Image Preview