আজ বুধবার (১০ জুলাই) সকাল আটটা থেকে রিকশা চলাচলে নিষিদ্ধ গাবতলী-আসাদগেইট, সাইন্সল্যাব-আজিমপুর এবং প্রগতি সরণির কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ-সায়দাবাদ সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর প্রধান তিনটি সড়কে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে টানা দু’দিন আন্দোলনের পর ফের রিকশা চলাচল শুরু হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কোনো তৎপরতা না থাকাকেই দায়ী করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে পুলিশ বলছে, এটা দেখভালের দায়িত্ব তাদের একার না, সিটি করপোরেশনেরও।
সম্প্রতি রাজধানীর প্রধান তিন সড়কে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞাকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানালেও রিকশা মালিক ও চালকরা তোয়াক্কা না করেই প্রধান সড়কে চালাচ্ছেন রিকশা ও ভ্যান।
বুধবার সকালে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড-নতুনবাজার-বাড্ডা-রামপুরা সড়কের শাহজাদপুর বাড্ডা এলাকায় অনেকগুলো রিকশা ও ভ্যান চলাচল করতে দেখা যায়। যদিও আগের চেয়ে সংখ্যায় কম, কিন্তু একটু পরপরই প্রধান সড়কে উঠছে রিকশা ও ভ্যান। এতে যান চলাচল আগের মতোই বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে পুলিশকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষকে অটল থাকার অনুরোধ এসব সাধারণ মানুষের।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন প্রধান সড়কে রিকশা চালাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রিকশাচালক মর্তুজার সোজাসাপ্টা জবাব, এতো নিষেধাজ্ঞা বুঝি না। পেটে ভাত না থাকলে রাস্তায় নামতে হবে। এতে নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে না।
উত্তর বাড্ডার ৬০টি রিকশার মালিক মোহম্মাদ বাকের শেখ বলেন, ‘গত দুইদিনের আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে বুধবার সকাল থেকে চালকেরা সড়কগুলোতে রিকশা নিয়ে নেমেছে। এরপর যদি কোনো বাধা আসে সেক্ষেত্রে আমাদের নেতারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের দায়িত্ব শুধু পুলিশের একার নয়। পুলিশ ও সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন যদি সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ না করে তাহলে তো সেটা বাস্তবায়ন কঠিন।
সড়কে এখনও রিকশা চলাচল করছে, এ ব্যাপারে পুলিশ কী পদক্ষেপ নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এদিকে দুপুরে গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগরভবনে রিকশা মালিক-চালক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে বৈঠকে বসবেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএনসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন।
তিনি বলেন, মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে আজ রিকশা মালিক-চালক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ডিএমপি কমিশনার, সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে। সভা শেষে এ বিষয়ে ব্রিফ করা হবে।
এর আগে গত ৩ জুলাই রাজধানীর নির্দিষ্ট মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। পরে একই সিদ্ধান্তের কথা জানান উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
প্রাথমিকভাবে গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রিকশা চলাচল করবে না সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে রামপুরা হয়ে খিলগাঁও-সায়েদাবাদ পর্যন্ত রিকশাসহ অন্যান্য অবৈধ ও অনুমোদিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ডিটিসিএ ( ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটি) এর এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রিকশাচালকরা গত দুইদিন আন্দোলন করে আসছিল। দ্বিতীয়দিনের মতো মঙ্গলবার দিনব্যাপী সড়ক অবরোধের পর বিকেল ৪টার দিকে সড়ক ছাড়ে রিকশাচালকরা।