রাজধানীর ওয়ারীর বাসায় শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার সকালে শিশুটির বাবা আবদুস সালাম অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন।
আজ রবিবার সায়মার হত্যাকারীকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার যুবকের নাম হারুনুর রশীদ। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়।
ঘটনার পর হারুন পলাতক ছিল। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে কুমিল্লার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইফতেখার আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিশু সামিয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে হারুন।
এদিকে শিশু সায়মার বাবা আব্দুস সালাম জানান, হারুন ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের খালাতো ভাই। সে ভবনের ৮ তলায় পারভেজের বাসায় থাকতো এবং ঠাটারিবাজারে একটা রঙের দোকানে কাজ করতো।
দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সামিয়া আক্তার সায়মা। বাবা-মা আদর করে ডাকতো সায়মা বলে। ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়ত সে। গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার ওয়ারি এলাকায় বহুতল ভবনের সবচেয়ে উপর তলার একটি শূন্য ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে সায়মার রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
বাবা-মার সঙ্গে সায়মা ওই ফ্ল্যাটেরই ষষ্ঠ তলায় থাকতো। ওপর তলার একটি ফ্ল্যাটে প্রায় প্রতিদিনের মত ওই দিন বিকেলে খেলতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় সাত বছরের সায়মা। সন্ধ্যার পরও ঘরে না ফিরলে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে রাত আটটা নাগাদ শিশুটির রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সায়মার বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ভবনে ফ্ল্যাট কেনার পর তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে ওঠেন
পুলিশ বলছে, হারুনই ভবনের অন্য একটি ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে সায়মাকে হত্যা করেছে। ফাঁকা ফ্ল্যাটটিতে নির্মাণকাজ চলছিল। এ কারণে সেখানে কেউ বসবাস করছিল না।
শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ময়নাতদন্তের পর ডাক্তাররা তাদের রিপোর্টে বলেছেন, শিশুটিকে জবরদস্তি করে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে শিশুর বাবা আব্দুস সালাম বাদি হয়ে ওয়ারি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ তদন্ত করছে। ভবনের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সন্দেহে কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর ঘাতক হারুনুর রশীদকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে ‘ধর্ষক’ হারুনের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। দাবি উঠেছে, জনসম্মুখে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় নাহিদ বোরহান নামের একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ওয়ারীর শিশু সায়মার ধর্ষণ ও হত্যাকারী হারুনুর রশীদ। প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এই জানোয়ারের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
হারুনের গ্রেফতার হওয়া ছবিসহ তার পোস্টের নিচে এ কে সাইফুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘এদের আমাদের কাছে ছেড়ে দেয়া হোক। ওদের মতো পশুদের চামড়া তুলে লবণ এবং লংকা গুঁড়া লাগিয়ে রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকানোর পর আবার লবণ মরিচ দিতে হবে। এভাবে বার বার দিতে হবে। সাথে অই বেহায়া যন্ত্রটাকে কেটে সমান করে দিতে হবে। তা দেখে যদি সুবিধাবাদী, লোভী, বাটপার মানবতার অবতার কোন কথা বলতে আসে এদেরও একই কাজ করতে হবে। তাহলে দেখবেন সমাজে একটা ধর্ষণ নাই। কোন মা-বোনকে ভয়ে আতংকিত থাকতে হবে না।’
মোহেমা আক্তার নামের একজন লিখেছেন, “প্লিজ, ধর্ষণের শান্তি মৃত্যু-- ‘দণ্ড’ (দণ্ড) করুন। -- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।”
শিশু সামিয়া আফরিন সায়মা ছবি পোস্ট করে এস কে লাভলী নামের আরও একজন লিখেছেন, ‘নিচের এই ছবিটা আমাকে খুব কস্ট (কষ্ট) দিচ্ছে, কিছুতেই মন সরাতে পারছিনা....। আমিও এক কন্যা সন্তানের হতভাগ্যো মা...... পেটের দায়ে যখন বাসা থেকে বাহির যা-ই.. তখন কাজে মন বসাতে খুব কস্ট (কষ্ট) হয়.. মন থাকে বাসায় পড়ে, আমার মেয়ে ঠিক আছে তো..? কোন বিপদ ওকি মারছে না তো..? একটু পর পর কল দিচ্ছি একবার কল রিসিভ না করলে মনের ভয়ে কতকিছুইনা ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। যদি কোন বিপদ হয়ে যায় তাহলে আমি কি করবো কিভাবে বাঁচব........ আল্লাহর কসম আমি যদি জীবনে একবারও এমন কোন জানোয়ারের দেখা পাই.... কচু কাটা করে কাটবো, ওই জানোয়ারকে বুঝিয়ে দিবো বাকি জানোয়ারদের যে-ই এ-ই মেয়ে মানুষ তোকে দুনিয়াইতে আলো দেখিয়েছে আবার এ-ই মেয়ে মানুষই.. কেটে কুত্তারে খাওয়াচ্ছি.... হয়তো কুত্তাও ছুয়ে দেখবেনা ওসব নরপিশাচের মাংস।’
প্রীতি ওরিসা নামের একজন লিখেছেন, ‘সরকার ধর্ষকের শাস্তিজনিত আইন মা-বাবার হাতে তুলে দিক। এতো এতো ট্যাক্স সরকারকে না দিয়ে সেই টাকা দিয়ে জনগণ প্রাইভেট গোয়েন্দা সেবা নিতে শুরু করুক। হে রাষ্ট্র এবার তবে বিশ্রাম নাও। আরআইপি।’