আমদানি দুধের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশ দুগ্ধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে আকিজ গ্রুপ বড় ভুমিকা পালন করে চলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, জনপ্রতি দৈনিক ২৫০ মি.লি. দুধের চাহিদা হিসেবে প্রায় সাড়ে চার কোটি লিটার দুধের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রতি ১৬০ মি.লি. (সর্বোচ্চ), যা আমাদের চাহিদার মাত্র ৬০%। কিন্তু গত এক দশকে বাংলাদেশে দুগ্ধ-শিল্প অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে উঠেছে। বর্তমান সরকারের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার মোট নয়টি লক্ষ্যমাত্রার সাথে এ খাত সরাসরি সংযুক্ত।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আকিজ গ্রুপের হেড অফিসে তরল দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় ‘সাম্প্রতিক বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার বিষয়ক’ সংবাদ সম্মেলন করে আকিজ গ্রুপ। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট ডিরেক্টর এসকে শামিম উদ্দিন। এছাড়াও কথা বলেছেন আকিজ গ্রুপের ব্র্যান্ড মার্কেটিং প্রধান মো: মাইদুল ইসলাম ও এজিএম (মান নিয়ন্ত্রক) ইকবাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য পণ্যের মান নির্ধারনের জন্য রয়েছে একটি অত্যন্ত কার্যকর প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেটি বিএসটিআই নামে পরিচিত। বিএসটিআই পণ্যের জাতীয় মান প্রণয়ন করে থাকে এবং জাতীয়মান প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করে, যারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ডের আলোকে এবং আমাদের আভ্যন্তরিণ প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জাতীয় মান প্রণয়নের ক্ষেত্রে মতামত প্রদান করে থাকেন। এই টেকনিক্যাল কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। বাধ্যতামূলক পণ্যের ক্ষেত্রে এই জাতীয়মান অনুসরণ করতে হয় এবং আমরা আকিজ ফুড এ্যান্ড বেভারেজ লিঃ পাস্তুরিত তরল দুধের ক্ষেত্রে এই জাতীয়মান অনুসরন করে লাইসেন্স নিয়েই সুনামের সাথেই প্রক্রিয়াজাত, মোড়কজাত ও বাজারজাত করে আসছি। এছাড়াও আপনারা জানেন আমাদের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নতুন একটি সংস্থা তৈরী হয়েছে যা বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ(বিএফএসএ) হিসেবে পরিচিত। আমরা এই সংস্থার সব রকমের নিয়মাবলী মেনেই পাস্তরিত দুধ প্রক্রিয়াজাত, মোড়কজাত ও বাজারজাত করে থাকি।
বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি কিছু সংখ্যক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে পাস্তুরিত তরল দুধ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করছেন যা খুবই উৎসাহব্যঞ্ছক ও দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, তাদের এই গবেষণায় ফলাফলের ব্যাখ্যা কিংবা উপস্থাপন খুবই নেতিবাচক, যা দুগ্ধ শিল্পের বিকাশের অন্তরায়। তেমনি সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অতি পরিচিতও সুনামধন্য প্রফেসর আ ব ম ফারুক পরিচালক বায়ো মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন যেখানে ঢালাওভাবে পাস্তুরিত দুধকে অনিরাপদ ও মানহীন বলা হয়েছে। যা মোটেও সত্য নয়। প্রফেসর জনাব ফারুক স্যারের রিপোর্টি বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, উনি উনার গবেষণার ফলাফলে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা বলেছেন। কিন্তু কত পরিমাণে তা উপস্থিত উনি তা প্রকাশ করেননি এবং এর গ্রহণযোগ্য মাত্রার সর্ম্পকেও কিছু বলেননি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দাবি করেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত ফুড সেফটি রেগুলেশন্স-২০১৭ এর এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ সম্পর্কে বলা আছে এবং এর মাত্রা কত হবে সে সম্পর্কেও বলা আছে। অথচ রির্পোটে শুধুমাত্র এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কথা গণমানুষের মধ্যে শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে যা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন। এছাড়াও তার রির্পোটে অনুজীবের যে মান বলা হয়েছে (৩০সিএফইউ/এমএল) তা সঠিক নয়। অনুজীবের ক্ষেত্রে বিএসটিআই-এর মান মাত্রা হচ্ছে ২০০০০ সিএফইউ/এমএল প্রতিটি প্রতিষ্ঠান মেনে চলতে বাধ্য। সুতরাং এর প্রেক্ষিতে ও প্রদত্ত ফলাফল সঠিক নয়।
বক্তারা আরও বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে বিএসটিআই এবং বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাজারে প্রাপ্ত সকল ব্র্যান্ডের তরল পাস্তুরিত দুধ বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা করেছেন এবং সেই রির্পোট হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন। যার ফলাফল সন্তোষজনক এবং যা সকল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
‘প্রফেসর ফারুক স্যার একটি সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মানিত ব্যক্তি কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরণের টেষ্ট করার জন্য উনি কিংবা উনার গবেষণাগার সক্ষম কিনা এবং এই ধরনের পরীক্ষার যে পদ্ধতি সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কী না’।
বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি দুগ্ধশিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প এবং বর্তমানে, প্রাণিসম্পদ খাতের অবদানমাত্রা ১.৮% হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২০% সরাসরি এ খাতের সাথে যুক্ত। বাংলাদেশের গবাদি পশু পালন একসময় গৃহস্থ-বসত ভিটায় সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে গবাদি পশুপালন একটি ব্যাণিজিকভাবে সফল শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে ১ লক্ষেরও বেশি নিবন্ধিত খামারি রয়েছে, যার অর্ধেক উচ্চ শিক্ষিত যুবকদের উদ্যোগে পরিচালিত। তাই দেশবাসীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই শিল্পের সাথে জড়িত নয় কিংবা এই শিল্পের উপর দক্ষতা নেই এমন কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মন্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে সরকারিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও হাইর্কোটের নির্দেশনা মেনে চলি।