Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ রবিবার, মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নতুন কৌশলে তৎপর এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০১৯, ০৯:৪৯ AM
আপডেট: ২১ জুন ২০১৯, ০৯:৫৭ AM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


ই-কমার্স, কম্পিউটার ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্সের নামে নগরজুড়ে নতুন কৌশলে শুরু হয়েছে বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) কার্যক্রম। অনেককেই স্বল্প সময়ে বিত্তবান হওয়ার নেশায় সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশি অভিযানে এসব চক্রের একাধিক সদস্য গ্রেফতার হওয়ার পর এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

সম্প্রতি একটি এমএলএম কোম্পানির সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গত ১৮ জুন কাজীর দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারে ‘এনেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লিমিটেড’ নামে ওই কোম্পানির সাতজনকে আটক করে। পরে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, কম্পিউটার ও ইংরেজি কোর্সের আড়ালে অবৈধভাবে এমএলএম ব্যবসা চালানোর অভিযোগে তাদের ধরা হয়।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, ইউনিপে-টু, স্পিক এশিয়াসহ বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিরা ‘এনেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে অবৈধভাবে ব্যবসা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির শোরুমে পণ্য আছে জানিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে দিতে পারলে কমিশনের লোভ দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করত।

পুলিশের এ অভিযানের পর বেরিয়ে আসছে এমএলএম কোম্পানির নানা তথ্য। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, গ্রেপ্তার সাতজন ডেসটিনিতে কাজ করত। সরকার প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় তারা ‘এনেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ খুলেছে। তারা নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী ও গ্রামের লোকজনকে টার্গেট করত। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়েবসাইটে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরলেও মূলত এমএলএম ব্যবসা করত।

এনেক্সের প্রতারণার শিকার সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র রিফাত হাসান বলেন, ‘আমি কম্পিউটার কোর্সের জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু তারা ক্লাসের প্রজেক্টরে দেখাত ‘সহজে টাকা আয়ের কৌশল’। টাকা রোজগারের মাধ্যম হিসেবে তারা প্রথমে কিছু পণ্য কিনতে বাধ্য করে। এরপর আরও কয়েকজন সদস্য ভর্তি করাতে বলায় আমি প্রতারণা বুঝতে পারি। এই খপ্পর থেকে বের হয়ে এসেছি সাড়ে ১০ হাজার টাকা বিসর্জন দিয়ে।’

আরেক ভুক্তভোগী চন্দনাইশের বশির উল্লাহ বলেন, কয়েকটি পণ্য কেনার পর বলা হয়, ৫০ জন সদস্য করতে পারলে আরএমও (রিয়েল মার্কেটিং অফিসার) পদ দেওয়া হবে। এটি তাদের একটি কমিশনভিত্তিক পদ। যখন বুঝতে পারি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছি তখন আর ব্যবসা করব না জানালে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এনেক্সের এক কর্মচারী জানায়, শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছিল। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫৮০০ টাকা করে নিয়ে কম্পিউটার ও ইংরেজি কোর্সে ভর্তি করিয়ে পরে তাদের এই ব্যবসায় দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখানো হতো। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এর সাবেক কর্মী শরীফ খান বলেন, টাকা আয়ের অলীক স্বপ্ন দেখাতেন অ্যাডমিন রবিন মিত্র। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩০ হাজারের মতো সদস্য রয়েছে, যাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়েছে চক্রটি।

ডেসটিনির একসময়ের গ্রাহক বাপ্পা ভট্টাচার্য বলেন, এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা নতুন কিছু নয়। নানা প্রলোভন দেখিয়ে এরই মধ্যে দেড় শতাধিক কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ডেসটিনি, ইউনিপে-টু, স্পিক এশিয়ার প্রতারণা সবার জানা আছে। এরকম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরও অভিযান পরিচালনা করা দরকার।

Bootstrap Image Preview