Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জান্নাতির গায়ে আগুন দেয় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০১৯, ১০:৩১ AM
আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯, ১০:৩১ AM

bdmorning Image Preview


মাদককারবারে জড়িত না হওয়ায় নরসিংদীর হাজিপুরে স্কুলছাত্রী ও গৃহবধূ জান্নাতিকে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডে তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের নরসিংদী পুলিশ সুপার এআরএম আলিফ জানান, জান্নাতি হত্যা মামলায় আদালতে রবিবার দুপুরে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

এই প্রতিবেদনে মামলায় অভিযুক্ত জান্নাতির শ্বশুড়-শাশুরি, স্বামী ও ননদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফরেনসিক রিপোর্ট ও মেডিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সবকিছু তদন্ত করতে একটু সময় লেগেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডে আদালতের পর এবার থানায় মামলা হয়েছে। গত শনিবার রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে আটক করেছে।

মডেল থানায় দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন- নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। তারা সবাই চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।

আটকরা হলেন-শান্তি বেগমের বোন মাদককারবারি সাথী আক্তার, দেবর নওসের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাতো ভাই জাহাঙ্গীর। মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদককারবারে সম্পৃক্ত করতে শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ দিতে থাকেন। এতে রাজি হননি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন।

যৌতুকের টাকা না দেওয়াসহ মাদককারবারে জড়িত না হওয়ায় চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শাশুড়ি, ননদ ও স্বামী জান্নাতির শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান আদালতে মামলা করেন। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আদালত ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বললেও দীর্ঘ ৫১ দিন তদন্ত শেষে রবিবার আদালতে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। থানায় মামলার পর বাদী শরীফুল ইসলাম খান বলেন, আমার মেয়ের হত্যাকা-ের বিচার চাই। দেরি করে হলেও পিবিআই হত্যাকা-ের প্রমাণ পেয়েছে। পুলিশের কাছে আমার দাবি-এজহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকা-ের সব রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা করার পর পরই আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Bootstrap Image Preview