লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও ডাক্তারের অভাবে সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না আক্রান্তরা।
শনিবার (১৫ জুন) হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বহিঃবিভাগের চিকিৎসার জন্য অনেকেই শিশু নিয়ে অপেক্ষা করলেও শিশু কনসালটেন্ট ডাঃ মোস্তফা জামানের কক্ষে তালা ঝুলছে। ফলে চিকিৎসা নিতে পারছেন না দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।
বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, শিশুকে নিয়ে বহিঃবিভাগে ডাক্তারের সেবা নিতে এসে দেখি ডাক্তারের কক্ষে তালা লাগানো।
এ ছাড়াও হাতিবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন আরমান হক লামের পিতা মোকছেদুল হক বলেন, ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু সকালে একজন ডাক্তার দেখে গেলেও শিশু কনসালটেন্ট এর দেখা মেলেনি।
উপজেলার সিঙ্গিমারী এলাকার আসাদুল ইসলাম জানান, টানা তিন দিন ধরে তিনিসহ তার পরিবারে তিনজন জ্বরে ভুগছেন। মাথাসহ পুরো শরীর ব্যথা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সঙ্গে থাকে সর্দি ও কাশি। শুধু তার পরিবারই নয়। তাদের পাড়ার অনেক বাসায় জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।
তবে এ বিষয়ে শিশু কনসালটেন্ট ডাঃ মোস্তফা জামান বলেন, আমি ছুটিতে আছি। আগামী কাল আসেন কথা হবে।
হাতিবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, প্রচণ্ড গরমের কারণে অনেকেই জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ৩ দিনে ভাইরাস ও আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৩৭ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও বহিঃ বিভাগ ও জরুরী বিভাগেও ২ শতাধিক শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাতিবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আল-মামুন ও বহিঃ বিভাগের চিকিৎসক ফারহানা সিদ্দিক জানান, সারাদিন যত রোগী দেখেছেন তার ৬০ ভাগই ভাইরাস জ্বর ও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। পারিবারিকভাবে সচেতন হলে এ রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জেলায় ভাইরাসজনিত জ্বর ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। রোগীকে সেবাদানকারী ব্যক্তির অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অন্যথায় ছড়িয়ে পড়বে। তবে আক্রান্তের ৫ দিন পরও জ্বর ভালো না হলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়াও সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাইরাসজনিত জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা প্রায় সবাই স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক সেবনও বেড়েছে। যারা ৭-১০ দিন যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত তারা ছুটছেন জেলার হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।
তবে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের মতে, এটি আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত ভাইরাস জ্বর। আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্তদের আলাদা বিছানায় রেখে সেবা করতে হবে। তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যাওয়ার কারণে প্রধাণত এরকম ভাইরাসজনিত রোগ ছড়িয়ে থাকে। যা হাঁচি, কাশি বা লালার মাধ্যমেও অন্যদেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ চিকিৎসকদের। এছাড়াও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক সেবন করতেও নিষেধ করছেন তারা।