Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ মঙ্গলবার, মে ২০২৪ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আদালতে আইনজীবীসহ নুসরাতের ভাইকে গালি দিল খুনিরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯, ০৯:৩২ PM
আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ০৯:৩২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত ১৬ জনসহ মোট ২১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে নিয়ে আসার সময় এরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন। বলতে থাকেন নুসরাত আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া আসামিরা হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় বাদীদের দিকে তেড়ে আসেন। তাদের আদালতে উঠানো হলে বাদী পক্ষের আইনজীবীদের লক্ষ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালিও করেন। একই সঙ্গে নুসরাতের ভাইকে গালি দিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির জন্য চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামিসহ এ মামলায় গ্রেফতার ২১ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই নোমান ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। ওই সময় আদালতের কাঠগড়া থেকে মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই নোমান এবং বাদী পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন আসামিরা। সেই সঙ্গে তাদের হুমকি দেন তারা।

মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা আদালতে পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে আমাকে, আমার পরিবার ও আমার আইনজীবীকে হুমকি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমাদের গালি দিয়েছেন তারা। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার পরিবারকে আক্রমণ করে হুমকি দিয়েছে আসামিরা।

এ বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে নোমান বলেন, আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হবে।

বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন একই অভিযোগ করে বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আসামিরা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনও আমাদের হুমকি দিয়েছেন। মামলার বাদী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।

একই দিন দুপুরে মামলার ২১ আসামিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে নুসরাত হত্যা মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন আদালত।

নুসরাত হত্যা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তারা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, আফসার উদ্দিন, জোবায়ের আহম্মেদ, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, জাবেদ হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহীম শরিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, মহিউদ্দিন শাকিল। যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- আরিফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, কেফায়েত উল্লাহ, নুর হোসেন, আলাউদ্দিন।

নুসরাত হত্যা মামলায় মোট সাক্ষী ৯২ জন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষী। মামলায় সাতজন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপও আদালতে জমা দেয়া হয়।

নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কারাগার থেকেই তিনি মামলা তুলে নেয়ার জন্য নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। তাতে নুসরাত ও তার পরিবার রাজি না হলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন অধ্যক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে নুসরাত ওই ভবনের চার তলায় যান। সেখানে বোরখা পরা চার-পাঁচজন তাকে সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

Bootstrap Image Preview