Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ রবিবার, মে ২০২৪ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বড়লেখায় নারী আইনজীবী খুন : রিমান্ডে গিয়েই মুঠোফোনের তথ্য দিলো ইমাম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯, ১০:২৬ AM
আপডেট: ২৯ মে ২০১৯, ১০:২৬ AM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খুন হওয়া নারী আইনজীবী আবিদা সুলতানার ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা মাদ্রাসা এলাকার একটি বাসায় ইমাম তানভীর আলমের ব্যাগ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়। ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা তানভীরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ এই মুঠোফোন উদ্ধার করে।

এই বাসা থেকে সোমবার (২৭ মে) তানভীর আলমকে আটক করা হয়েছিল। মোবাইল ফোন উদ্ধারে তানভীকে শ্রীমঙ্গল ওই মাদ্রাসায় নিয়ে যায় পুলিশ।

মুঠোফোনের বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুছ ছালেক বলেন- বিকেল সাড়ে ৫টায় ফোন উদ্ধার করা হয়। তানভীর এতেকাফের কথা বলে ওই বাসায় আগে উঠেছিল। সে রিমান্ডে রয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবিদার মুঠোফোন পাওয়া যায়।

আবিদা সুলতানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতে বড়লেখা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- আবিদা সুলতানার বাবার বাসার ভাড়াটিয়া তানভির আলম (৩৪), তানভিরের ছোট ভাই আফছার আলম (২২), স্ত্রী হালিমা সাদিয়া (২৮) এবং মা নেহার বেগম (৫৫)। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি।

এরপর মঙ্গলবার বড়লেখা থানা পুলিশ মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে আসামিদের ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তানভির আলমের ১০ দিন এবং তাঁর স্ত্রী সাদিয়া ও মা নেহার বেগমের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তানভিরের ছোট ভাই আফছার আলম পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ, নিহতের পরিবার, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তাঁর স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। মেয়েদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) সবার বড়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। ছুটির দিনে বাবার বাড়ি দেখাশোনা করতে সেখানে যেতেন।

রোববার (২৬ মে) আবিদা সুলতানা বোনের বাড়ি বিয়ানীবাজার ছিলেন। ওইদিন (রোববার) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় জরুরি প্রয়োজনে তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। বাবার বাড়ি আসার পর বিকেল পাঁচটার দিক থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আবিদা সুলতানার স্বামী ও বোনরা তাঁকে খুঁজতে বাবার বাড়ি মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা ঘরের কক্ষ বন্ধ দেখতে পান। চার কক্ষবিশিষ্ট বাসার দুই কক্ষে আবিদা সুলতানা ও তাঁর বোনরা বেড়াতে আসলে থাকেন। বাকি দুটোতে ভাড়া থাকতেন তানভির আলমের পরিবার। তিনি তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। এসময় তানভির আলমের পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে ছিলেন। পরে ভাড়াটেরদের কাছ থেকে চাবি এনে ওইদিন (গত রোববার) রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে দেখে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পুলিশ ওইদিনই তানভির আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তানভির আলমকে সোমবার (২৭ মে) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে আটক করা হয়।

এই ঘটনায় আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া আটক তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আটকৃতদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখায়।

এদিকে আবিদা সুলতানা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বড়লেখা আইনজীবীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। মঙ্গলবার (২৮ মে) বড়লেখা আদালত চত্বরে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দীপক কুমার দাস। আইনজীবী জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, এপিপি গোপাল দত্ত, আইনজীবী ইয়াছিন আলী, শৈলেশ চন্দ্র রায় ও আফজাল হোসেন, হারুনুর রশিদ, সুভ্রত কুমার দত্ত, শিক্ষানবিশ আইনজীবী জান্নাতুল ইসলাম নূরী, আইনজীবী সহকারী মো. সুনাম উদ্দিন প্রমুখ।

Bootstrap Image Preview