নানা অনিয়ম আর অব্যস্থাপনার পর গাজীপুরের কালীগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আহেদের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপিড়নের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছে।
রবিবার (৫ মে) সকালে অভিযোগের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ইউএনও মো. শিবলী সাদিক। বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিপীড়নকারী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ জুন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রাশিদা বেগমের বদলি হয়। পরে ওই বছরই সেপ্টেম্বরে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. আব্দুল আহেদ যোগদান করেন। নিয়মানুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই বিদ্যালয়ে চলতে থাকে নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা। এর ধারাবাহিকতায় ওই বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীদেরকে নানাভাবে যৌন নিপিড়ন করে আসছিল। কিন্তু নিপিড়নকারী ওই আব্দুল আহেদের হুশিয়ারী ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করলে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হবে। সেই ভয়ে শুরু থেকে কেউ কিছু না বললেও নিপিড়নকারীর নিপিড়ন অসহ্য মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর সেই ছাত্রীরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর কয়েকজন ছাত্রী প্রতিবেদককে জানায়, তারা বান্ধবিরা মিলে যখন গ্রুপ ছবি তুলত, তখন ওই শিক্ষক তাদের সাথে ছবি তুলতে আগ্রহী হত এবং তাদেরকে বুকের ওড়না ফালাতে বাধ্য করত। নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের গায়ে ও স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিত আব্দুল আহেদ। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বড় ছাত্রীদের ওড়না ছাড়া নৃত্য পরিবেশনে বাধ্য করত। ছাত্রীদের বয়সন্ধিকালে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষিকার কাছে না গিয়ে তার কাছে আসতে বলত এবং মাসিকের সময় কি কি করতে হবে সে ব্যাপারে ছাত্রীদের বলত। তবে এত নিপিড়নের পরও কারো কাছে ঘটনা না বলার হুশিয়ারী ছিল ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষকের। আর ঘটনা কারো কাছে বললে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যের ভয় দেখাত বলেও জানায় ছাত্রীরা।
এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মকে অবমাননা, নিজের ইচ্ছা মত ভর্তি বাণিজ্য ও অতিথি শিক্ষক নিয়োগ, সহকর্মীদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ, অতিরিক্ত ভর্তি ফি, অনিয়মিত উপস্থিতি, ভিন্ন অজুহাতে বেতনের সাথে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম আর অব্যস্থাপনার অভিযোগও ছিল। যা নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে লিখিত অভিযোগের পর থেকে আব্দুল আহেদ বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে তার সাথে মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একাধিকবার কল দিয়ে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, ছাত্রীদের কাছে আগেই মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম এবং বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। কিন্তু যেহেতু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান তাই নিয়মের মধ্যে থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই ছাত্রীদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং সেই প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ জুবের আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. লতিফুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নূর-ই-জান্নাত। কমিটিকে আগামী ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়েছে।