বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ উপকূলেও আঘাত হানতে পারে অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি। শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে ঝড়। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, ৩ মে, দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে পুরীর চাঁদবালি ও গোপালপুরের মধ্যে আছড়ে পড়বে এই ঝড়। গতিবেগ ১৭০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ৩ মে থেকে উপকূলবর্তী এলাকাসহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বৃষ্টি চলবে। পরের দিন হবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফণী’। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এখন এটি সিভিয়ার সাইক্লোনের রূপ নিয়েছে৷ কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের নাম হঠাৎ ফণী কেন হল?
বাংলাদেশ থেকে নাম দেয়া হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়টির। ফণী শব্দটি বাংলা। সহজ অর্থে এটি সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণীকেই বুঝিয়ে থাকে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক সভায় এই নামটি আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ছিল বলে জানা গেছে আবহাওয়া অফিস সূত্রে। আর এই ফণীর পরের ঝড়ের নামটি ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ‘ভায়ু’ দেওয়া হবে ৷ অর্থাৎ দাঁড়ায় যে, ফণীর তান্ডবলীলার পরেই আসছে ‘ভায়ু’।
প্রতিটি ঝড়েরই আগে থেকে নাম ঠিক করে রাখা থাকে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সভায় প্রতিটি দেশেরই এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে ঠিক করে নেন যে, পরবর্তী কয়েকটি ঝড়ের কী নাম হবে।
টাইফুন, হ্যারিকেন বা সাইক্লোনের মতো ঝড়কে নাম দেওয়ার শুরু প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে ৷ ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা আগে ঝড়ের নাম দিতেন।
পরে মার্কিন আবহাওয়াবিদরা এই প্রথাটি গ্রহণ করেন ৷ পরে তা সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে ৷ যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটির আটটি দেশ। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান ৷
তবে বেশিরভাগ নামগুলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক শাখাতেই করা হয়। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় ডব্লিউএমও বা এসকেপ।
এক সময় ঝড়ের নামের পরিবর্তে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হতো ঘূর্ণিঝড়কে। কিন্তু নম্বরগুলো সাধারণ মানুষের কাছে বেশ দুর্বোধ্যই ছিল। এর ফলে ঝড়ের পূর্বাভাস কিংবা সতর্ক করার ক্ষেত্রেও বেশ ঝামেলাতেই পড়তে হতো।
এই ঝামেলা থেকেই মুক্তির জন্য ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোতে ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে বছরই আটটি দেশ মিলে ৬৪টি ঝড়ের নাম প্রস্তাব করে। প্রতিটি দেশ ৮টি করে নাম প্রস্তাব করে। সেই সময়ই বাংলাদেশ ফণী নামটি প্রস্তাব করেছিল। সবমিলিয়ে আর সাতটি ঝড়ের নাম এখনো অবশিষ্ট আছে সেই সংস্থার কাছে। এরপর নতুন ঝড়ের নামের জন্য আবারও সভায় বসতে হবে তাদের।