Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চালককে পেছনে বসিয়ে রিকশা চালালেন প্রতিমন্ত্রী পলক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মে ২০১৯, ১০:০৩ PM
আপডেট: ০১ মে ২০১৯, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


মহান মে দিবস উপলক্ষে সারাদেশ এমনকি সারাবিশ্ব জুড়ে পালিত হয়েছে নানান কর্মকাণ্ড। তবে সামাজিক মাধ্যমে হইচই ফেলেছে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।

তিনি সরাসরি রাস্তায় নেমে রিকশা চালিয়েছেন। এই ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ওই ভিডিও শেয়ার করেছেন প্রতিমন্ত্রী নিজেই।

আজ বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ জেলা সিংড়া থেকে ওই ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি।

ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন –

“এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলাদেশের কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।”
– বঙ্গবন্ধু

কৃষকের, শ্রমিকের, মজুরের, আমারই দেশ সব মানুষের…

মহান মে দিবস অমর হোক।

যেভাবে এলো মে দিবস

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর সময়কার কথা। শ্রমিকরা তখন দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করলেও তার বিনিময়ে সামান্য মজুরিও পেতেন না। শিল্প মালিকরাই অধিক লাভ ভোগ করতো। উল্টোদিকে শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করতো। উপরন্তু ছিল মালিকপক্ষের অনবরত অকথ্য নির্যাতন। কখনো আবার তা পৌঁছাতো ক্রীতদাসতুল্য পর্যায়ে!

১৮৬০ সালে শ্রমিকরা তাদের মজুরি না কমিয়ে সারা দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের জন্য দাবি জানান। এ জন্য তাঁরা একটি সংগঠনও তৈরি করেন পরবর্তীকালে, যার নাম হয় আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার। এই সংগঠন শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিরত আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের স্লোগান ছিল-‘Eight hours for work, eight hours for rest, eight hours for what we will.’

হে-মার্কেট ট্রাজেডি: ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেন ১৮৮৬ সালের পহেলা মে পর্যন্ত। বারবার মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও একটুও সাড়া মেলে না তাঁদের কাছে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এ বিষয়ে এক আলোড়ন তোলা আর্টিকেল। ব্যস, বিদ্রোহ ওঠে চরমে। আর শিকাগো হয়ে ওঠে প্রতিবাদ-বিদ্রোহের মূল মঞ্চ।

পহেলা মে যতই এগিয়ে আসছিল, দুই পক্ষের সংঘর্ষ অবধারিত হয়ে উঠছিল। মালিক-বণিক শ্রেণি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। পুলিশ আগেই শ্রমিকদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। আবারও চলল তেমনই প্রস্তুতি। শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে পুলিশকে বিশেষ অস্ত্র কিনে দেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন লাখ শ্রমিক কাজ ফেলে নেমে আসেন রাস্তায়। আন্দোলন চরমে ওঠে।

৪ মে, ১৮৮৬ সাল। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। চারিদিকে হালকা বৃষ্টির সাথে হিমেল হাওয়া বইছে। এরই মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ার নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন।

অগাস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, এতে মেথিয়াস জে. ডিগান নামের একজন পুলিশ তৎক্ষণাৎ এবং আরও ছয়জন পরবর্তীতে নিহত হয়। পুলিশবাহিনী শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়ট বা দাঙ্গায় রূপ নেয়। এই রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন।

মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি: পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে অগাস্ট স্পীজ-সহ মোট আটজনকে প্রহসনমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ‘অস্কার নীবে’-কে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। অবাক করা ব্যাপার হলো, ফাঁসি দেয়ার আগেই কারারুদ্ধ অবস্থায় ‘লুইস লিং’ নামের একজন আত্মহত্যা করেন। বাকি ছয়জনকে ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর তারিখে উন্মুক্ত স্থানে ফাঁসি দেয়া হয়।

ফাঁসিতে ঝুলার আগ মুহূর্তে অগাস্ট স্পীজ বলেছিলেন, ‘The day will come when our silence will be more powerful than the voices you are throttling today.’

তখন অ্যাডল্ফ ফিশার বলেছিলেন, ‘This is the happiest moment of my life.’ এবং আলবার্ট পারসন্স বলেছিলেন, ‘Let the voices of people be heard…’ তিনি এই বাক্যটি শেষ করার আগেই ফাঁসিতে মৃত্যু হয় তার।

মজার ব্যাপার হলো এই মিথ্যা বিচারের অপরাধ শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে। ২৬ জুন ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর জন পিটার অল্টগেল্ড -এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিথ্যে ছিল ওই বিচার। পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় শ্রমিকদের আত্মদান আর দাবি আদায়ের দিন হিসেবে।

হে-মার্কেট স্মৃতিস্তম্ভ: শিকাগোর ফরেস্ট পার্কে জার্মান ওয়াল্ডহেইম কবরস্থানে (বর্তমানে যা ‘ফরেস্ট হোম কবরস্থান’) ফাঁসি দেয়া পাঁচ শহীদ শ্রমিকদের (ফিল্ডেন ব্যতীত) সমাহিত করা হয়। ১৮৯৩ সালে তাঁদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। এর একশ’ বছর পর এসে ভাস্কর আলবার্ট ওয়েইনার্ট নির্মিত সেই স্মৃতিস্তম্ভটিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হিস্টোরিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ঘোষণা করে।

গ্রানাইটের তৈরি ১৬ ফুট উঁচু এই স্মৃতিস্তম্ভের সামনের দৃশ্যে দেখা যায় একজন পতিত শ্রমিককে ধরে রেখেছে বিচারের প্রতিনিধিত্বকারী এক নারী। এর পাদদেশে লেখা রয়েছে অগাস্ট স্পীজের সেই সর্বশেষ উক্তিটি-‘THE DAY WILL COME WHEN OUR SILENCE WILL BE MORE POWERFUL THAN THE VOICES YOU ARE THROTTLING TODAY’

স্তম্ভটির পিছনের দৃশ্যে রয়েছে গভর্নর অল্টগেল্ডের একটি ব্রোঞ্জের ফলক যা তার ন্যায়বিচারের প্রতীক।

উল্লেখ্য, শিকাগোর সেই হে-মার্কেট স্কয়ারেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে, সেটি নিহত পুলিশ অফিসার মেথিয়াস জে. ডিগানের স্মরণে!

বিশ্বব্যাপী মে দিবস: ১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী বছর থেকে ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’।

বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের প্রায় আশি-টিরও বেশি দেশে মে দিবস সরকারি ছুটির দিন। এছাড়া বেশ কিছু দেশে বেসরকারিভাবে পালিত হয়।

মজার ব্যাপার হলো যে দেশে এর জন্ম সেই যুক্তরাষ্ট্রই মে দিবস পালন করে না। একই কথা কানাডার ক্ষেত্রেও। এই দুটি দেশ সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার শ্রমিক দিবস পালন করে থাকে।

Bootstrap Image Preview