Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ বুধবার, মে ২০২৪ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাস্তার পপিকে ১৯ বছর লালন-পালন, বিয়ে দিয়ে কাঁদলেন পুলিশ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১ মে ২০১৯, ০৮:১৩ PM
আপডেট: ০১ মে ২০১৯, ০৮:১৩ PM

bdmorning Image Preview


পপিকে ছোট থেকে নিজের চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি। নিজের মেয়ের মতোই আদর করতাম। আজ স্বামীর হাতে তুলে দিলাম। আশা করি স্বামীর ঘরে সে সুখেই থাকবে। কথাগুলো বলার সময় চোখগুলো ছলছল করে উঠেছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার।

সেই ছোটবেলা থেকে যে মেয়েটিকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছেন তার বিদায়ে পুলিশ কর্মকর্তা জহিরের একটু মন খারাপ হবে সেটাইতো স্বাভাবিক।

তবে চমেক হাসপাতালে একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জহিরের মনে শান্তি এই ভেবে যে, দিনমজুর বাবা ও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের সন্তান পপিকে পাত্রস্থ করতে পেরেছেন তিনি। মেয়ের বিয়ে হওয়াতে খুশি পপির মা-বাবাও।

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে পপি আকতারের বিয়ে।

জানা যায়, চমেক হাসপাতাল এলাকায় বেড়ে উঠেছেন পপি। মা-বাবার সঙ্গে হাসপাতালের বারান্দায় ছিল পপির আবাস। পরে হাসপাতালের গণশৌচাগারের পাশে ছোট্ট একটি জায়গায় এক চালা ঘর তৈরি করে সেখানে মা-বাবার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। এসব দৃশ্য দেখে এগিয়ে আসেন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা জহিরুল হক ভূঁইয়া। নিজ সাধ্যের মধ্যে ভরণপোষণ করেন পপির। দিন যায়, মাস যায়। দেখতে দেখতে কৈশোর পেড়িয়ে ১৯ বছরের তরুণী হয়ে ওঠে পপি। জহিরুল হক ভাবলেন এবার পপিকে বিয়ে দিতে হবে। শুরু করলেন পাত্র খোঁজা। এর মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সাবের আহমদের ছেলে মো. জসিমের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় পপি আকতারের। পেশায় কৃষিকাজ করেন জসিম।

পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, এক দশক আগে ছোট মেয়েটিকে যখন হাসপাতালের বারান্দায় দেখি তখন মায়া লেগে যায়। তখন থেকেই সাধ্যমতো যতটুকু পেরেছি পপি ও তার পরিবারের জন্য করেছি। দেখতে দেখতে মেয়েটা বড় হয়ে গেল। তার পরিবারের সাধ্য নেই পপিকে বিয়ে দেওয়ার। তাই নিজ উদ্যোগেই পপির বিয়ে দিলাম।

তিনি বলেন, পপির বিয়ের কথা শুনে অনেকেই সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু কারো কাছ থেকে সাহায্য নিইনি। নিজে যতটুকু পেরেছি সেটার মধ্যেই আয়োজন করেছি।

জহির আরো বলেন, বিয়েতে প্রায় শতাধিক মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি পপিকে কিছু স্বর্ণালংকার ও গৃহস্থালি জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। বরকে দেওয়া হয়েছে একটি সোনার আংটিও।

জানতে চাইলে পপি আকতার জানান, জহির চাচা নিজের মেয়ের মতোই আমাকে বড় করেছেন। যখন যেভাবে পেরেছেন, সাহায্য করেছেন। আমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ। বাবা দিনমজুর। বাবার রোজগারে সংসার চালানোই দায়। সেখানে বিয়ের কথা ভাবা তো অসম্ভব কিছু। জহির চাচা না থাকলে আমাদের যে কি হত সেটা একমাত্র আল্লাহ-ই জানেন।

Bootstrap Image Preview