Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ সোমবার, মে ২০২৪ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হিন্দি সিরিয়াল দেখে জোড়া খুন করে তারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৫৫ PM
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


রাজশাহী নগরের আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে তিন বছর আগে পরিকল্পিতভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক প্রেমিক যুগলকে খুন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তকারী দল। ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটনায়। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে খুন করা ও পরে স্বাভাবিক থাকার কৌশল শেখে তারা।

ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দলের তদন্তের পরই বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক তথ্য।

এরই মধ্যে মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করেছে ছয়জনকে অভিযুক্ত করে রবিবার (২৮ এপ্রিল) আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করে পিবিআ। নির্ভুল চার্জশিট তৈরির আগে জিজ্ঞাসাবাদ, যাচাই-বাছাই করার কারণে মূলত প্রতিবেদন দাখিলে এতো সময় লেগেছে বলে জানান পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা।

রাজশাহী পিবিআইয়ের এডিশনাল এসপি আবুল কালাম আজাদ চার্জশিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার চার্জশিট রাজশাহী কোর্টে দাখিল করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের কাছে নাইস ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাহাত মাহমুদ (২১), রাজশাহী কলেজের প্রাণিবিদ্যার চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বোরহান কবীর ওরফে উৎস (২২), একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল-আমিন (২০) ও ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রার্থী আহসান হাবিব ওরফে রনি (২০), নাইস হোটেলের বয় নয়ন (৩২) ও বখতিয়ার (৩২)। বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা বাইরে আছেন।

অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি: এদের মধ্যে আহসান হাবিব, বোরহান ও নয়ন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা জানান, নাইস হোটেলের ওই কক্ষে মিজানুরকে প্রথমে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তারা সুমাইয়াকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। কিন্তু পুলিশের মেয়ে বলে ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে তারা তাকেও মুখে বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে কৌশলে কক্ষে তালা দিয়ে ভেতরের একটি ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যান। প্রেমঘটিত কারণে প্রতিশোধ নিতেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া চার তরুণ মিলে সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম সুজন বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তকাজ শেষ। রোববার আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এজন্য গত ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চার্জশিট দাখিলের জন্য সময় নেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী রোববার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

এর আগে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। তদন্ত করে আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছিল, সুমাইয়াকে খুন করে মিজানুর আত্মহত্যা করেছেন।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং ডিএনএ পরীক্ষার ফলে ত্রুটি ছিল। থানা পুলিশ তদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছিল, সুমাইয়াকে মাথায় আঘাত করেছিলেন মিজানুর। এরপর মিজানুর বালিশ চাঁপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। সুমাইয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার আগে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর মিজানুর আত্মহত্যা করেন। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় মিজানুরের দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা ছিল। এখান থেকেই ঘটনা নতুন করে মোড় নিতে শুরু করে। হাত বাঁধা অবস্থায় কোনো লোক তো ফ্যানের সঙ্গে অন্যকে ঝুলাতে পারবে না। পিবিআইয়ের তদন্তে একের পর এক আসল রহস্য বেরিয়ে আসতে থাকে। নিহত যুবক মিজানুর রহমান ও রনির একটি ফোন কলের সূত্র ধরে পিবিআই শনাক্ত করে গ্রেফতার করে চারজনকে। তদন্তে এ ত্রুটির কথা উল্লেখ করে আদালত পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি পাঠান। পরে পিবিআই তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। দেড় বছর পর ধরা পড়ে এ ঘটনায় জড়িত চার তরুণ।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রতিশোধ নিতে চার বন্ধু মিলে ওই তরুণীকে ধর্ষণের পর তার প্রেমিককেও হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত মিজানুর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার উমেদ আলীর ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। সুমাইয়ার বাবা আবদুল করিম পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন সুমাইয়া।

Bootstrap Image Preview