Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শুক্রবার, মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সুনামগঞ্জে নৌ-পথে চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বে যুবক খুন, গ্রেফতার ৮

সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৪০ AM
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৪৫ AM

bdmorning Image Preview


সুনামগঞ্জে নৌ-পথে বালু পাথর বাহি নৌকা থেকে চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষের হাতে মিজানুর রহমান (২৫) নামে এক যুবক খুনের ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।  

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেনসদর উপজেলার সদরগড় গ্রামের মৃত আবদুল হেকিমের ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে নুর জামাল ওরফে নইদ্যা একই গ্রামের, হাজি মাছিম আলীর ছেলে আবদুল হাই , গুলজার আহমদের ছেলে ছাত্তার হোসেন, শেরগুল আলীর ছেলে কামাল মিয়া, রেনু মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম, জমির আলীর ছেলে আবুল কালাম, ব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে আব্দুল মালেক, আবদুল মান্নানের ছেলে আলী আনোয়ার সহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সহোদর বড়ভাই জুনেদ মিয়া ওরফে জুনায়েদ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত মিজানুর রহমান সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুরের গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে।

প্রসঙ্গত: বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টার দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার অক্ষয় নগর গ্রামের খালের তীরে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়ে প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।

প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা ধারালো রামদা দিয়ে মিজানুরকে কুপিয়ে তার এক হাত কেটে ফেলে অপর হাতের কব্জি ও কেটে ফেলে। দু’হাত ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রামদা দিয়ে বর্বরভাবে কুপিয়ে মিজানুরকে খুন করা হয়।

ঘটনার পরপর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নিহতের বড়ভাই জুনেদ মিয়া ওরফে জুনায়েদ গণমাধ্যম ও থানা পুলিশকে জানান, সদর উপজেলার সদরগড় গ্রামের মসজিদের নামে প্রতিদিনের ন্যায় বালু-পাথর বাহি ষ্টিলবাডি নৌকা থেকে টাকা (চাঁদা) কালেকশান করতে গ্রামের বাড়ি ইব্রাহীমপুর থেকে মিজানুর রহমান তার অপর দুই সহযোগীর একজন সম্পর্কে রেজা উদ্দিন ওরফে রেজাউল ও অপর আরো একজনকে সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী গ্রাম অক্ষয় নগরের খালের মুখে যান।

পরবর্তী সদর উপজেলার একই ইউনিয়নের সদরগড় গ্রামে ইয়াবাসহ একাধিক মামলার আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে নুর জামান ওরফে নইদ্যার নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের চাঁদা আদায়কারী গ্রুপের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দুর্বৃত্তের দল মিজানুরকে টাকা কালেকশানে বাঁধা প্রদান করে। প্রতিপক্ষের লোকজন নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নৌ-পথে চাঁদা আদায়ের জের ধরে প্রথমে মারধর করার এক পর্যায়ে পরবর্তীতে ধারালো রামদা দিয়ে কুপিয়ে মিজানুরের লাশ খালের মুখেই ফেলে রেখে যায়। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে মিজানুরের মামা রেজাউলও আহত হন।

ঘটনার সম্পর্কে নৌ-পথে চলাচলকারী নৌযানের একাধিক মালিক, বালু পাথর ব্যবসায়ী ও এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, মূলত বৃহস্পতিবার শহর ঘেষা সুরমার নদীর উত্তরপাড়ের ধোপাজান চলতি নদীর পূর্বপাড়ে পূর্ব সদরগড় এলাকায় বালু মহালে চাঁদাবাজি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরেই মিজানুর রহমান নামে ওই যুবক খুন করা হয়। 

পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানা যায়, মূলত হত্যাকাণ্ডের শিকার ও হত্যাকারী দুটি পক্ষই নৌ-পথে চাঁদাবাজির ঘাট নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দ্বন্দ্বের জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ডেরঘটনাটি ঘটে। তারা আরো জানান, ধোপাজান বালু পাথর মহালে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ), সুরমা ইউনিয়ন ট্যাক্স, চলতি নদী উজানভাটি, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ( মসজিদ-মাদ্রাসা) সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের রশিদে বালু-পাথর বহনকারী বাল্কহেড, কার্গো, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং বারকী শ্রমিকদের নিকট থেকে নামে বেনামে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়।

আহত রেজা উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টায় আমার ভাগ্না মিজানুর আমাকে ফোন দিয়ে নদীর পাড়ের আব্দুন নূরের চায়ের দোকানে নিয়ে গেলে ওখানেই নদীতে নানা নামে নানা রশিদে টাকা আদায়কারী পশ্চিম সদরগড়ের নূর জামাল ওরফে নইদ্যা, আব্দুন নূর, রোকন মিয়া, খোকন মিয়া ও তেঘরিয়ার বশির আহমদ সহ ১০ থেকে ১২ জন চা ষ্টলে ঢুকে প্রথমে আমার মাথায় ঘুষি মারে। চা ষ্টল থেকে আমরা সরে যাওয়ার চেষ্টা করে বের হবার পরই প্রতিপক্ষের লোকজন দা, রামদা নিয়ে ফের হামলার করে। জন্য অগ্রসর হতে দেখে আমরা পালানোর জন্য দৌঁড় দেই। আমি সাঁতার কেটে নদীর পূর্বপাড়ে আসার চেষ্টা করি ওই সময়েই মিজানুরকে প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি কুপিয়ে বর্বরভাবে খুন করে।

মসজিদের নামে টাকা কালেকশানের বিষয়ে নিহত মিজানের ভাই জুনেদ গণমাধ্যকে বলেন,‘আমার ভাই ব্যবসায়ী, সে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত নয়। গ্রামের জামে মসজিদের পক্ষ থেকে মিজানুরসহ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ধোপাজান বালু পাথর মহাল থেকে মসজিদের সহায়তার অর্থ তুলতে। বৃহস্পতিবারও নদীতে মসজিদের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়েছিল মিজানুর।,

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার বলেন,‘আমরা নদী থেকে টোল আদায়ের জন্য কোন ইজারা দেইনি। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের নামে রশিদ ব্যবহার করে নৌ পথে চাঁদা আদায় যদি কেউ কওে সেটি চাঁদাবাজি হিসাবেই গণ্যহবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. শহীদুল্লাহ্ বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।, তিনি আরো বলেন প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে এবং যে যুবক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে মূলত দুই পক্ষে বিভিন্ন রশিদে ধোপাজান বা সুরমা নদীতে বালু পাথর বাহি নৌকা ট্রলার, বারকি নৌকা, বাল্ক হেট, কার্গো ও জাহাজ থেকে চাঁদা তোলে। ইউনিয়ন ট্যাক্স’এর কথা বলেও চাঁদা তোলা হয়। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিকট জবাব চাওয়া হবে। 

Bootstrap Image Preview