সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের মাঝ নদীতে যমুনায় ড্রেজার দিয়ে কোটি-কোটি টাকার বালু লুট অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য নদীর গতীপথ পরিবর্তন হয়ে স্রোত পশ্চিম পাড়ে আঘাত হানায় তাঁতসমৃদ্ধ অঞ্চল খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দক্ষিণে খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটারজুড়ে শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে অন্তত ৫০টির মত ঘর-বাড়ি। এই বালু উত্তেলনের ফলে আগামীতে এই এলাকার ভাঙন ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ কোন কাজেই আসবে না বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
এ দিকে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ-অভিযোগ থাকালেও উপজেলা প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না থাকায় প্রতিদিন লক্ষাধিক সেফটি বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহল।
জানা যায়, গত প্রায় ২৫/৩০ বছর পূর্বে থেকে চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর এবং স্থল ইউনিয়নের যমুনা নদী থেকে অন্তত ১০টি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ব্যবসার সাথে জড়িত। উপজেলা প্রশাসনের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে বছরে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হয়। অনেকের এ ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে রুপান্তর হয়েছে।
বর্তমানে এই বালু উত্তোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বালু দস্যুরা। এনায়েতপুর গ্রামের মন্টু সরকার ও আশরাফের নেতৃত্বে গত বছরের ন্যায় দু'সপ্তাহ ধরে আনা হয়েছে সুবিশাল ড্রেজার। এই ড্রেজার দিয়ে যমুনার মাঝ নদীতে সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের মৌহালী, ইজারাপাড়া, পশ্চিম দেওয়ানতলা ও রানজানপুরসহ পাশ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ও জালালপুর এলাকা থেকে দিন রাত তোলা হচ্ছে বালু। প্রতিদিন গড়ে তোলা লক্ষাধিক ঘনমিটার এই বালু এনায়েতপুর স্পারবাঁধের উত্তর পাশ ঘিরে রাখা হয়েছে বিশাল স্তুপ করে। যা বিক্রি হচ্ছে নদীর পশ্চিম পাড়ের এনায়েতপুরে।
জোড়পূর্বক বালু উত্তোলন করায় এলাকাজুড়ে সবার মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, মন্টু সরকার যেখান থেকে বালু উত্তোলন করছে সেগুলো আমাদের জমি। তারা আমাদের কারো কথা না শুনে প্রভাব খাটিয়ে কোটি-কোটি টাকার বালু কাটছে। উপজেলা প্রশাসনও কোন খোঁজ নিচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এ দিকে নদীর মাঝখানে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতীপথ পরিবর্তন হয়ে পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে পানি। এ জন্য তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চল, খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বাক্ষ্মনগ্রাম, আরকান্দি, জালালপুরে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন আরো তীব্রতর আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই ভাঙনে অন্তত ৫০টির মত ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে।
এখানে ভাঙন রোধে চলতি বছরেই কাজ হবার কথা রয়েছে। যদি ভাঙন আরো তীব্রতর হয়, তবে এ কাজ আরো ঝুঁকিতে ফেলবে বলে জানালেন বাক্ষ্মনগ্রামের ফিরোজ হোসেন, আব্দুল মালেক, এলাহী হোসেন, ঘাটাবাড়ির শহিদুল ইসলাম, আরকান্দির সুজাব আলী।
তারা জানান, আমরা নদী ভাঙনে এখন নিঃস্ব। বাকি কিছু জমি আছে তা আর বুঝি রক্ষা হবে না। যমুনা থেকে যেভাবে বালুখোর সন্ত্রাসীরা মাটি কাটছে, তাতে আমাদের আর বাঁচার উপায় নেই। এখনই যদি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে পুরো নদী গিলে ফেলবে ওরা।
বিষয়টি জানতে যমুনা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত এনায়েতপুর গ্রামের মন্টু সরকারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ দিকে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু তাহির জানান, নদী থেকে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও যারা আইন অমান্য করে বালু তুলছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।