Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ রবিবার, মে ২০২৪ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নুসরাতের পরিবারকে দোষি সাব্যস্ত করে চিঠি পাঠান এসপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১০ AM
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১০ AM

bdmorning Image Preview


ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির ঘটনায় আইনবহির্ভূত জিজ্ঞাসাবাদের অভিযোগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের একটি তদন্ত দলের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা।

ওসি মোয়াজ্জেমের এহেন কর্মকাণ্ডে যখন সর্বত্র চলছে সমালোচনা, তখন তাকে রক্ষায় তৎপর হওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে এ সংক্রান্ত যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ করেছেন, মামলা করতে নুসরাতের পরিবারই নাকি কালক্ষেপণ করেছিল। এ ছাড়া তারা মামলার এজাহার দুই দফায় ঘষামাজা করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে তার চিঠিতে। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ফেনীর এই এসপির প্রকৃত ভূমিকা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। গতকাল এ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা তদন্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এখন সোনাগাজীতে। তারা নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাস্থল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের ওই ভিডিওচিত্রে ওসি মোয়াজ্জেমের যে বক্তব্য, তা আইনবহির্ভূত ও পরোক্ষ যৌন হয়রানি। ওই ভিডিওচিত্রের ভিত্তিতে গত ১৫ এপ্রিল আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আইন বহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। এ বিষয়ে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে ইতোমধ্যেই পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পিবিআই সূত্র জানায়, মামলাটি আদালতে হওয়ায় ওসিকে গ্রেফতারের বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। তদন্ত সূত্র জানায়, পিবিআইর এএসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নারী সম্পর্কিত মামলা হওয়ায় এতে এক নারী কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পিবিআইপ্রধান বনোজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনায় যার যতটুকু সম্পৃক্ত বা অপরাধ পাওয়া যাবে তার ততটুকু শাস্তি হবে।'

এদিকে নুসরাত হত্যা মামলায় রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগের ছাপড়া মসজিদ এলাকা থেকে গতকাল ভোরে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবদুল কাদিরকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এর মাধ্যমে মামলাটির এজাহারভুক্ত ৮ আসামির প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বড় ভাই আবদুর রহিমের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন হাফেজ আবদুল কাদির। নুসরাত হত্যার অন্যতম এই পরিকল্পনাকারী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

হত্যায় জড়িতদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার শপথ

নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার জন্য শপথ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে মামলায় চার্জশিটভুক্ত করারও দাবি তোলেন তারা। গতকাল বুধবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনের চত্বরে আইনজীবী রাইটার্স ফোরামের পক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে এ শপথ করেন তারা।

আইনজীবীরা বলেন, আমরা নারী নির্যাতন আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি আমার বোন, আমার মেয়ে নাতনিসহ পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ রাখার জন্য। কারণ নারী নির্যাতন ইভটিজিং, যৌন হয়রানি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। এমনকি নারীরা প্রথমে নিজের ঘর থেকেই নিগৃহীত হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনার সঙ্গে সঙ্গে ওই থানার ওসি অভিযোগ না নিয়ে নুসরাতকে হয়রানি করেছিল তাকে মামলায় আসামি হিসেবে চার্জশিটভুক্ত করার দাবি তোলেন আইনজীবীরা।

 

Bootstrap Image Preview