Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

একটি জীবনের মূল্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৮ PM
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৮ PM

bdmorning Image Preview


ঠাকুরগাঁওয়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় পারুল আক্তার নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই মুত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মিমাংশা করেছে প্রভাবশালী একটি মহল।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে শহরের ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল আক্তার (২৩) সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাশুদেবপুর গ্রামে রাজীব হোসেনের স্ত্রী।

নিহতের স্বামী রাজীব হোসেন বলেন, তার স্ত্রী পারুল আক্তার গর্ভবতী ছিলেন। সোমবার সকাল ৬টার দিকে স্ত্রীর প্রসবের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সকাল ৮টার দিকে ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম আমার স্ত্রীর অপারেশন করেন এবং একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে আমার স্ত্রীর পেটের ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে এবং যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে।

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা স্টাফদের জানানো হলে তারা কোন সেবা প্রদান করেননি। এমনকি ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমও কোন খোজখবর নেয়নি। রাত ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

এ দিকে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ভাঙচুর করে।

তিনি বলেন, ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম আমার স্ত্রীর ঠিকমত অপারেশন করেনি। স্ত্রীর পেটে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে মারা যায়। এটি পুরোপুরিভাবে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা। ডাক্তারের ভুলের কারণে আজ আমার স্ত্রী এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

এ দিকে রাত ১২টার দিকে ঠাকরগাঁও ক্লিনিক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ নিহতের পরিবারকে নিয়ে মিমাংশায় বসেন। সেখানে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

ঠাকরগাঁও ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলী বলেন, মেয়েটি মারা গিয়েছে। হাজার চেষ্টা করলেও সে তোর আর ফিরে আসবে না। কিন্তু সদ্য জন্ম হওয়া ছেলে সন্তানটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে দেওয়া হয়। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ওই ক্লিনিকে তালা দেওয়া হয়।

সদর থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এ ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো: খয়রুল কবির বলেন, অপারেশন করার কয়েকঘণ্টা পর ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে একটি মেয়ের মৃত্যু হয়। মেয়েটি কিভাবে মারা গিয়েছে এ জন্য ডাক্তার নাদিরুল আজিজকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট আছে কি না এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন ডা. আবু মো: খয়রুল কবির বলেন, ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।

ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েটির অপারেশন করে সুস্থ্য একটি সন্তান এই পৃথিবীর বুকে এসেছে। অপারেশন খুব ভাল হয়েছে। কোন ভুল হয়নি।

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের মালিক গোলাম মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।

Bootstrap Image Preview