কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও ছড়া খাল থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত এসব বালু প্রশাসনের সামনে দিয়ে শত শত ড্রাস্পার ও ১০ চাকা বিশিষ্ট ট্রাক ভর্তি করে বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করছে এলাকার ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী সিন্ডেকেট।
মাতামুুহুরী নদীর দক্ষিণ পাশ ও ১নং ওয়ার্ডের আমান্ন্যারচর এলাকা এসব বালু ভর্তি ট্রাক যাচ্ছে রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাজে। এতে সরকার এককানা কড়ি রয়েলট্রি না ফেলেও ক্ষমতাধর এক ব্যক্তির পকেটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বর্তমানে ওই এলাকাগুলো মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গত রবিবার ডুলাহাজারা রংমহল এলাকায় বগাছড়ির ছড়াখালে পড়ে ২ শিশু কন্যা প্রাণ হারিয়েছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন ওই বগাছড়ি খালে ড্রেজার মেশিং বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ছড়াখালের বিভিন্নস্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত।
স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন, পুরো উপজেলায় একজন ক্ষমতাধর জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় অবৈধ বালু উৎসব চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ এতে বাঁধা দিচ্ছে না। ফলে বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে গ্রামীণ অবকাঠামো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ছড়া খাল ও নদীর উভয় পার্শ্বে ঘরবাড়িগুলো ভেঙে পাড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড দিগরপানখালী, পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আমান্ন্যারচ, ৮নং ওয়ার্ড মাতামুহুরী ব্রিজের দক্ষিণ পাশসহ উপজেলার খুটাখালী, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পূর্ব ও পশ্চিম বড় ভেওলাসহ অর্ধশত পয়েন্টে ড্রেজার মিশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষত মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় সরকার এককানা কড়িও রাজস্ব না ফেলেও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ও ছড়া খালে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিবারাত্রি বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে এসব স্থানে বালু উত্তোলনের কারণে শতাধীক বাড়ি নদী ও ছড়াখালে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া গ্রামীন অভ্যন্তরিন সড়কগুলো ভেঙে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানা খন্দক ও গর্ত। এতে নজর দিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে- ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙনের শিকার হলে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবেনা। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালককে স্ব-স্ব এলাকার লোকজন অভিযোগ করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এখনও কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণকরা হয়নি।