Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ রবিবার, মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাহাড়ি পল্লীতে নববর্ষ পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৭ PM
আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


বান্দরবানে নববর্ষ পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকা বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করে মাহা-সাংগ্রাইং উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাইং নামে এ উৎসব পালন করে। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমনের পূর্বে তাই পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে নিচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নর্ববষ পালন করে থাকে। মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় 'সাংগ্রাইং' উৎসব। মূলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি, তাই বান্দরবানে মূলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন।

কয়েকদিন বাদেই সাংগ্রাই উৎসব, তাই নতুন পোষাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং গ্রামের আদিবাসীরা ভিড় জমিয়েছে স্থানীয় মার্কেটগুলোতে। শেষ মহুর্তের বেচাকেনায় দারুণ খুশি ক্রেতা বিক্রেতারা।

মাহাসাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে বাজার করতে আসা মংশৈপ্রু মার্মা জানান, প্রতিবছরের মত এবারেও আমাদের সামনে নতুন বছর আসছে, তাই বাজার করতে এসেছি। পরিবার পরিজনের জন্য নতুন পোশাক ক্রয় করবো আর আনন্দের মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে উদযাপন করবো।

উৎসব উপলক্ষে বাজারে আসা মং মং সিং জানান, বাজারে এসেছি মা বাবার জন্য নতুন পোষাক ক্রয় করবো আর নতুন বছরের নতুন নতুন জিনিসপত্র দিয়ে বাড়ি-ঘর সাজাবো। বাংলা নববর্ষ আর আমাদের সাংগ্রাই, তাই ৪ দিন আমরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।

বান্দরবান বাজারের ব্যবসায়ী রধনু ষ্টোরের স্বতাধিকারী মো: সোহেল বলেন, বাঙ্গালীদের পহেলা বৈশাখ আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নতুন বছরকে ঘিরে এখন জমজমাট আয়োজন চলছে পাহাড়ের প্রতিটি পরিবারে। সারা বছরের চেয়ে তাই একটু বেশি বেচাঁকেনা হয় আমাদের। আমরা এই সময় আমাদের দোকানে নানান ধরনের মালামাল কালেকশান করি, আর বিক্রি করেও লাভবান হই।

এ দিকে প্রতিছরের ন্যায় এবারো ও নতুন বছরকে বরণ আর পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মাহাসাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদ। আর এই সাংগ্রাইং উৎসবের মধ্যদিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙালিদের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের পুন্যতা ঘটবে এমটাই আশা আয়োজকদের।

বান্দরবানের মাহাসাংগ্রাইং উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মার্মা জানান, প্রতিবারের মত আমরা বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ৪ দিন বর্ণিল আয়োজন করছি। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা, মৈত্রি পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করেছি। আর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

পার্বত্য এলাকায় এই ধরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। প্রতিটি অনুষ্ঠানে পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা যেন সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে তার জন্য উৎসবস্থলসহ পুরো বান্দরবানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বান্দরবান একটি শান্তপ্রিয় শহর। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে এই এলাকার পরিবেশ সবসময় শান্ত থাকে, তারপরও আমরা নিরাপত্তার জন্য কোন ছাড় দেই না। আমরা নববর্ষকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশ পর্যাপ্ত পরিমান সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় সজাগ রয়েছি।

উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের আয়োজন আরো জমজমাট হবে আর, নতুন বছর অতীতের সকল দুঃখ-কষ্টকে মুছে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ শান্তি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

নানা আয়োজনে ১৩ই এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের, আর শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্ঠিত হবে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ই এপ্রিল বিকালে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ই এপ্রিল বিকালে মৈত্রি পানি বর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর সবশেষে ১৬ই এপ্রিল আলোকচিত্র প্রদশনী, সন্ধ্যায় বিভিন্ন বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী মাহাসাংগ্রাইং উৎসবের।

Bootstrap Image Preview