নর শব্দের অর্থ মানুষ। মানুষকে সুন্দর করে তোলাই হচ্ছে নরসুন্দর বা নাপিতের কাজ। নরসুন্দর বা নাপিত এক শ্রেণীর পেশাজীবি যারা মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুল দাড়ি ছাঁটা বা কামানোর কাজ করে থাকেন। পূর্বে সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই মূলত এই পেশায় যুক্ত থাকলেও বর্তমানে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেককে এই পেশায় কাজ করতে দেখা যায়।
এক সময় গ্রামের হাট-বাজারে গাছের তলায় নরসুন্দরেরা খুর-কাঁচি নিয়ে দল বেঁধে কাজ করত। হাটুরেরা তাঁদের কাছ থেকে গোঁফ ও চুল দাড়ি কাটিয়ে নিত। এছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়েও তারা চুল দাড়ি কামাতেন। গ্রামের কেউ কেউ আবার বাৎসরিক চুক্তিতে ধান, চাল ও ডালের বিনিময়ে তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের চুল দাড়ি কাটিয়ে নিতেন। গ্রামে সদ্যজাত শিশুর মাথা ন্যাড়া করার দ্বায়িত্বও তাদের পালন করতে হত। এছাড়া শিশু ভুমিষ্ট হলে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি অথবা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আত্মীয় স্বজনের কাছে সংবাদ আদান প্রদানের কাজটিও তাদের মাধ্যমে করানো হত। এ ক্ষেত্রে উভয় পরিবারের কাছ থেকেই তারা পুরস্কৃত হতেন।
বর্তমানে শহরের মত গ্রামের হাট বাজারে গড়ে উঠেছে সুসজ্জিত সেলুন। সেখানে খুর-কাঁচি ছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতি দেখা যায়। সার্ভিস চার্জও গাছতলা থেকে অনেক বেশি। তবুও ভীড়ের কমতি নেই সেলুনগুলোতে। বগুড়ার শেরপুরে এমন সেলুনের সংখ্যা অনেক। যেখানে কেটালক দেখে নিত্য নতুন ডিজাইনের চুল কাটছেন এবং শিতাতপ নিয়ন্ত্রিতভাবে চুল কেটে মজাও পাচ্ছে গ্রাহকেরা। গাছ তলায় যে নরসুন্দর খুর-কাঁচি নিয়ে বসে থাকেন, তার কাছে দু’চার জন বয়স্ক ব্যক্তি ছাড়া সচরাচর কেউ বসে না।
শহরের বৈকাল বাজার এলাকার এক নরসুন্দরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ৩০ বছর যাবৎ এই কাজ করে তিন ছেলে মেয়েকে বড় করেছি, মেয়েটিকে পাত্রস্থ করেছি। দুই ছেলে একজন ঢাকায় সেলুনে কাজ করে আরেকজন এলাকায় ভাল একটি সেলুন দিয়ে বসেছে। আমি হাটে-বাজারে কাজ করে কোন মতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আর আগের মত কাষ্টমার পাই না। বর্তমানে হাট বাজারে অনেক সুসজ্জিত সেলুন হয়েছে। মানুষ এখন সেলুনে যায়, আমাদের কাছে আসে না। তারপরেও সংসার চালানোর খরচ যোগাতে হাটে বাজারে আসি। হাটের শেষে যে কয় টাকা পাই তাই দিয়ে সংসারের বাজার করে বাড়ি ফিরি।
হৃদয় জেন্টস পার্লার এন্ড সেলুনের প্রোপাইটার হৃদয় দাসের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি অনেক ছোট থেকে এই পেশার সাথে জড়িত। এখন কাষ্টমার টাকার চিন্তা খুব কম করে তারা ভাল কাজ এবং আরাম দায়কভাবে কাজ করতে চায়। তাই আমরা একটু আধুনিকতার সাথে আমাদের সেলুন সাজিয়েছি এবং দুটি টাকা বেশি কাজ করছি।