পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, অসামঞ্জস্য উন্নয়ন ক্যানসারের মত, আর্থিক উন্নয়নে আমরা ধনী হচ্ছি কিন্তু সভ্য হচ্ছি না যার ফলে নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার রুমে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আমরা তাদেরকে আবার একটি অনিরাপদ জায়গায় ঠেলে দিচ্ছি। বাল্যবিবাহ দেয়ার মাধ্যমে আমরা নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করছি।
তিনি বলেন, আজ আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছি পক্ষান্তরে নারীকে তার নিজ ঘরে আটকিয়ে রাখার ইন্ধন দিচ্ছি, সেই জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভঙ্গি বদলাতে হবে। বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি, সমাজে বাল্যবিবাহের গ্রহণযোগ্যতা, বিদ্যমান আইন ও তার প্রায়োগিকতা নিয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭: প্রয়োগ ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনা সভা আয়োজন করে। সভা ‘ক্রিয়েটিং স্পেসেস টু টেক অ্যাকশন অন ভায়োলেন্স এগেইন্সট উইমেন অ্যান্ড গার্লস’ প্রকল্পের আওতায় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও অক্সফ্যামের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
এই আয়োজনে অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশ ওমেন নেটওয়ার্কের যুগ্ম সম্পাদক শেহেলা পারভিন (পুলিশ সুপার) বলেন, 'বিগত ১৬ বছরে পুলিশে নারীদের সংখ্যা ১% থেকে বেড়ে ৭% হয়েছে। যা নারীদের সহায়তাপ্রাপ্তিতে অবদান রাখছে, নির্যাতনের শিকার নারীরা মূলত নারী পুলিশের কাছেই মামলা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে'।
তিনি আরো বলেন, 'দারিদ্রতা বা নিরাপত্তার অভাবই বাল্যবিবাহের কারণ নয় যৌতুকও বাল্যবিবাহের একটি প্রধান কারণ'।
তিনি উল্লেখ করেন, গত ৪ বছরে যৌতুকের জন্য নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো: সারাফুজ্জামান আনছারী বলেন, 'বাল্যবিবাহে শরীয়াহ আইন মোতাবেক বিবাহ অবৈধ নয়, কিন্তু আইন অনুযায়ী বাল্যবিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা, নতুন আইনে উক্ত সমস্যাটি সামাজিকভাবেই মোকাবেলার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কোন এলাকায় বাল্যবিবাহ সংঘটিত হলে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাগণকে বাল্যবিবাহ বন্ধের ক্ষমতা দেয়া আছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বাল্যবিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে'।
তিনি বলেন, শূধুমাত্র বাল্যবিবাহ বন্ধের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টকেও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দেয়া আছে। এছাড়াও পুলিশ বাল্যবিবাহ বিষয়ক যেকোন মামলা নথিভুক্ত করতে বাধ্য।
আমরাই পারি জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক বলেন, 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন নিয়ে আমরাই পারি জোট দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে'।
প্রজনন ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা; হালিদা আকতার বলেন, বাল্যবিবাহের ফলে একজন নারী শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন করার প্রতি তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং ক্ষতিকর দিকগুলো প্রচারণার কথাও বলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিকাহ রেজিস্টার, ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান এবং আইনজীবীরা বাল্যবিবাহের যে কারণ গুলি তুলে ধরেন তারমধ্যে নকল জন্ম নিবন্ধন, ফটোকপি জন্মনিবন্ধন, মৌলভি দ্বারা বিয়ে পড়ানো, লুকিয়ে বিয়ে দেয়া যা আবার রেজিষ্ট্রি না করা,এফিডেভিট করা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার উদাহরণ তুলে আনেন।